gfhbtyjhyu
POst 1

gfhbtyjhyu
ঢাকার কাছেই শ্রীনগরের নাগেরপাড়া গেলে ঘুরে আসতে পারেন হলুদ সরষে ফুলের এই মাঠে। ছবি: লেখক
চোখে সরষে ফুল দেখা মানে বিপদ। আর চোখ দিয়ে প্রকৃতির সরষে ফুল দেখা আনন্দের। দারুণ এক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের শীতের প্রকৃতিতে।
শীতের এই সময়ে সরষে ফুলের দারুণ হলদে প্রকৃতি দেখে আসতে পারেন চাইলেই। যেমন ঢাকার কাছেই আছে নন্দনকোন। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের নন্দনকোন নামেই মুগ্ধতা ছড়ায়। যখন সরষে ফুল দেখার আমন্ত্রণ পেলাম তখন আর না করতে পারলাম না। চিকিৎসক নাজমুল হকের সঙ্গে পৌষের এক সকালে পথে নামলাম। শ্রীনগর খুব বেশি দূরে নয়। বাবুবাজার ও ধলেশ্বরী জোড়া সেতু পার হয়ে নিমতলী এসে নাশতা খেলাম। সেখান থেকে নন্দনকোন আধা ঘণ্টার পথ। ঘোর-লাগা কুয়াশা অনেকখানি বিদায় নিয়ে সূর্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, আবার পথ সঙ্গী হলো। এবার নিমতলী থেকে এগিয়ে বাঁ দিকে চৌধুরী সড়কের দক্ষিণমুখী পথে আমাদের যাত্রা। সাতগাঁও পর্যন্ত যেতে পারিনি, তার আগেই দুই চোখ হলুদাভ উজ্জ্বল রং নিল।
বাসাইল, সিরাজদিখান
প্রথম দৃষ্টিতেই প্রেমে পড়ার অবস্থা যাকে বলে। জায়গার নাম নাগেরপাড়া। নাগেরপাড়া সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে আশ্চর্য হয়ে দেখি উজ্জ্বল হলুদ রঙে মাঠ সেজেছে। শুধু হলুদ বললে ভুল হবে। একবারে স্বর্ণাভ হলুদ। সরষে খেতের সেই হলুদ রং যেন আকাশে মিশেছে, সঙ্গে কচি সরষে ফুল দুলছে মিষ্টি উত্তরে হাওয়ায়। আমরা পায়ে পায়ে সরষে খেতের দিকে এগিয়ে গেলাম। আহা, সরষে ফুলের সৌরভে কী আশ্চর্য মাদকতা! সে মাদকতার টানেই মৌমাছিদের ভিড়। আর বকপাখিদের আনাগোনা। আমি এবার ছেলেমানুষের মতো মৌমাছির পেছন পেছন ছুটলাম এবং শেষ পর্যন্ত একটা মৌমাছি ধরেই শান্ত হলাম। তারপর ছবি তোলায় মনোযোগ। ছবি তোলায় মগ্ন আমি হঠাৎ দেখি একটি মানুষের মাথা হলুদ ফুঁড়ে বের হলো। খেয়াল করিনি আশপাশে অনেক গৃহবধূ সরষে খেতে কাজ করছেন। কেউ-বা সরষে শাক কুড়াচ্ছেন। এভাবেই সরষে ফুলে আমরা মোহাবিষ্ট হয়েছিলাম এক ঘণ্টা। পেটে টান পড়তে আমাদের মোহ ভাঙে। আমরা নন্দনকোনের পথ ধরি।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সরষে দেখার এখনই সময়। সারা দেশ সরষে ফুলের হলুদ রঙে রঙিন হয়ে আছে। সরষে ফুলের সৌন্দর্য ও তার সুবাসে মুগ্ধ হতে চাইলে আজই বেরিয়ে পড়ুন। চলে যান ঢাকা থেকে মাওয়া রোড ধরে আবদুল্লাহপুর, লৌহজং বা সাইনপুকুর। এখানে পথে পথে সরষে ফুলের মুগ্ধতা। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের গ্রাম বেজেরহাটি, বাসাইল হয়ে নাগেরপাড়া বা নন্দনকোন, ডেমরা হয়ে নরসিংদী বা আমিনবাজার পার হয়ে মানিকগঞ্জ। যেখানেই যান পুরোটাই মনে হবে হলুদ দুনিয়া।
র্যাংক | গন্তব্য | কতজন পর্যটক এসেছেন (২০১৬ সালে) |
কতজন পর্যটক এসেছেন (২০১৫ সালে) |
২০১৫ থেকে ২০১৬-র পরিবর্তন (%) |
২০১৪ থেকে ২০১৫-র পরিবর্তন (%) |
---|---|---|---|---|---|
১ | ![]() |
82.6 মিলিয়ন | 84.5 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
২ | ![]() |
75.6 মিলিয়ন | 77.5 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৩ | ![]() |
75.6 মিলিয়ন | 68.5 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৪ | ![]() |
59.3 মিলিয়ন | 56.9 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৫ | ![]() |
52.4 মিলিয়ন | 50.7 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৬ | ![]() |
35.8 মিলিয়ন | 34.4 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৭ | ![]() |
35.6 মিলিয়ন | 35.0 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৮ | ![]() |
35.0 মিলিয়ন | 32.1 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
৯ | ![]() |
32.6 মিলিয়ন | 29.9 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
১০ | ![]() |
31.3 মিলিয়ন | 39.5 মিলিয়ন | ![]() |
![]() |
লোকালয়ের ঠিক পাশেই পাহাড়টি। সেই পাহাড়ে দিনভর রোদের আলো খেলা করে, হাজার পাখির মেলা বসে, আর সবুজের আসর জমে বছরের পর বছর। আঁকাবাঁকা এক ঝিরিপথে পাথর ডুবিয়ে চলে ঠান্ডা পানির আয়েশি পথচলা, সে পানির ধার ঘেঁষে এক পা ডুবিয়ে শিকারের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বসে থাকে সাদা বকের ঝাঁক। আর দু-কূল ছাপানো বুনোগাছের আড়ালে কৌতূহলী চোখ মেলে চেয়ে থাকে বানরের দল, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাকে কোনো এক দলছুট পাহাড়ি হরিণ। এমনই মায়া-ভালোবাসা আর আদর ঘিরে গড়ে ওঠা এই চিরসবুজের বনটা হঠাৎ করেই কেঁপে ওঠে পাশ দিয়ে ছুটে চলা ট্রেনের শব্দে! কাদা-মাটি আর পিচ্ছিল পাথুরে ঝিড়িপথের জল-ঝরনাঘেরা লোকালয়ের খুব কাছের এই জায়গাটির নাম সীতাকুণ্ড বন। এবারে আমরা তাঁবু গেড়েছিলাম জল-ঝরনার এই বনে, তারার সঙ্গে সারা রাত কথা বলেছিলাম অচিন পাথরের গায়ের ওপরে হেলান দিয়ে।
এবারের প্ল্যানটা হুট করেই হয়ে গেল। কাঁধের ছোট্ট ব্যাগটিতে একটা মোটাসোটা ‘কম্বল’ ভরেই রওনা দিলাম চট্টগ্রাম। সকাল নয়টার গাড়ি আমাকে বিকেল পাঁচটায় নামিয়ে দিল সীতাকুণ্ড বাজারে। ইকোপাকের্র গেটটা পার হয়ে দেখি, সেখানে আগে থেকেই হাসিমুখে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে অনেকগুলো চেনা মুখ—অপু ভাই, লিমন ভাই, রুপা আপু, আরমান ভাই ও রুবা আপু।
বিশাল বিশাল ব্যাগ নিয়ে সবাই হাঁটা শুরু করেছে, হাতে রাতের খাবারের জন্য বাজার সদাই, কী নেই তাতে! খিচুড়ি রাঁধার ডাল থেকে শুরু করে সালাদ বানানোর টমেটো পর্যন্ত রয়েছে, সেগুলোর ভিড়ে আবার থলে থেকে উঁকি দিচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে বয়ে আনা মুরগির মাংস।
সীতাকুন্ড পাহাড়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখ রাখলাম এক্কেবারে ওপরের পাহাড় চূড়াটায়, আর পা চালালাম সবুজ কেটে কেটে তৈরি করা একমাত্র মাটির রাস্তাটি ধরে। সে রাস্তা সাপের মতো এঁকেবেঁকে ঝুপ করে গিয়ে পড়েছে পাথুরে ঝিরিতে, সেটা দিয়ে নিশ্চিন্তে বয়ে চলেছে পৌষের শীতের ঊষালগ্নে হাড় কাঁপিয়ে দেওয়া ঠান্ডা পানি! একেকবার একেকজনের পা পড়ে সেই পানিতে আর গগনবিদারী আওয়াজে ভরে ওঠে বনের এমাথা-ওমাথা।
দিনের আলো যখন আমাদের একাকী করে তারার দেশে রেখে গেল, ঠিক সে সময় দেখা মিলল আমাদের কাঙ্ক্ষিত জায়গার। এখানেই আমরা তাঁবু খাটাব আজ রাতে, মোমের আলোতে ভাসিয়ে দেব পাহাড়ি ঝরনার ক্ষীণ স্রোতগুলোকে, আর কনকনে বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে গলা ছেড়ে গাইব স্বরচিত কোনো গান। অন্ধকারে যখন আমাদের হাতের তালু ছাড়া নিকটবর্তী আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না, ঠিক সে সময় আমরা হাঁচড়েপাঁচড়ে উঠে পৌঁছালাম পাহাড়ের এক্কেবারে চূড়ায়, এখান থেকে একনিঃশ্বাসে পুরো ঝরনাটা দেখা যায়, বর্ষাকালে চারপাশের বন, পাহাড় আর বাতাস কাঁপিয়ে যেই ঝরনাটা নেমে আসে—সেখানে এখন হেলেদুলে বয়ে চলেছে রুগ্ণ পানির ধারা। এই জায়গার নাম সুপ্তধারা ঝরনা।
ক্যাম্পিং করার প্রথম শর্তই হলো তাঁবু ফেলার জন্য ভালো ও আরামদায়ক একটা জায়গা খুঁজে বের করা। দ্বিতীয় শর্ত হলো খাবার রান্নার জন্য আগুনের ব্যবস্থা করা, আর তৃতীয় শর্ত হলো আয়েশ করে আসমান দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাওয়া। সুতরাং বসে থাকলে তো আমাদের হবে না, বিরাট বিরাট সব পাথর পড়ে আছে আমাদের সামনে, দুনিয়ার আর সব মানুষের কাছে এগুলো সামান্য পাথর হলেও আমাদের চোখে তখন এগুলো জলজ্যান্ত একেকটা বিছানা, কোন পাথরে কোন তাঁবু ফেলা হবে, তাই নিয়ে জল্পনাকল্পনা আর গবেষণায় স্রোত বয়ে গেল মিনিট পাঁচেক। টপাটপ করে সবার ব্যাগ থেকে বের হতে লাগল ভ্রাম্যমাণ ঘর, এদের মধ্যে একটা তাঁবু আবার বিশালতার দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেল, যখন সেটাকে দাঁড় করানো হলো তখন সে রীতিমতো একটা বিশাল ঘরে পরিণত হলো, যেখানে অনায়াসেই আটজন হাত-পা মেলে ঘুমাতে পারবে। তাঁবুর গায়ে বাবর আলী নেপাল থেকে নিয়ে আসা প্রেয়ার ফ্ল্যাগ লাগিয়ে দিল কয়েকটা।
আমি হাঁ করে তাঁবুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখি পোলাপাইন সব গায়েব! কেউ চলে গেল লাকড়ি জোগাড় করতে, আগুন জ্বালাবে। আর কেউ গেল স্টোভ জ্বালাতে, কফি বানাবে। সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভয়াবহ ঠান্ডা পানিতে খাবারদাবার কাটাকুটি করতে বসে গেল রুপা দিদি! যে পানি দূর থেকে দেখলেই ঠান্ডায় গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়, সেই পানিতে অবলীলায় তিনি মুরগি, পেঁয়াজ, টমেটো কেটে আবার চাল, ডালও ধুয়ে ফেললেন! ওদিকে সবার পেটে তখন ছুঁচোর নাচন—লাকড়ি রেডি, রান্না করার জন্য খাবার রেডি, পিপাসা মেটানোর জন্য ঝরনার অঢেল পানি রেডি, আর কিসের চিন্তা। এবার জ্বালাও আগুন!
রান্না চড়িয়েছেন রুমী ভাই, তাঁকে সার্বক্ষণিক সাহায্য করছেন বুনো ভাই। এই দুজনের হাতের রান্না যেন শিল্প হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সবার প্লেটে প্লেটে। এতগুলো প্লেটও আসলে আনা হয়নি! ফলে কেউ খেতে বসল কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসা সন্দেশের প্যাকেটে, আবার কেউ খেতে বসল পাতিলের ঢাকনা উল্টো করে। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন আরমান ভাই, তিনি মগের মধ্যে খিচুড়ি-মাংস ঢেলে লাল জ্যাকেট পরে বসে গেলেন কমলা আলোর কোলে।
রান্নার স্বাদ এখনো মুখে লেগে রয়েছে, ফারহান ভাইয়ের কাছে রান্না এতই মজা লেগেছে যে তাঁকে খিচুড়ির পাতিলের আশপাশ থেকে নড়ানোই যাচ্ছে না, শেষমেশ খোকন কারিগর এসে তাঁকে পাঁজাকোলা করে তাঁবুতে নিয়ে শুইয়ে দিলেন, সঙ্গে দিলেন পানির বোতল, উনি সারা রাত পানি খেয়েই পার করে দিলেন!
রাতের খাবারের পাট চুকিয়ে আমরা সবাই মুখোমুখি হলাম আকাশের, সেখান হাজার তারার মেলা বসেছে। সবাই সেজেছে আলোর সাজে। নিকষ আঁধারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সব কটা তারা যেন আমাদের জন্যই কুয়াশাকে বিদায় করে দিয়েছে আজ, আজ তাদের অতিথিদের মুগ্ধ করার রাত, আজ তাদের নিজেদের উজাড় করে আঁধার পৃথিবীটা আলোকিত করার রাত। প্রতি ঘণ্টায় পাল্টে যাচ্ছে আকাশের দৃশ্যপট, তারার সারি ক্রমেই বাড়ছে, দেখে মনে হচ্ছে রাতের সঙ্গে সঙ্গে ঘুমও ভাঙছে তাদের, একেকজন একটা একটা করে চোখ মেলছে আর একটা একটা করে তারার জন্ম হচ্ছে ঘুটঘুটে কালো আকাশের গায়ে।
এবার মোমবাতি জ্বালানো হবে। সবাই মিলে চললাম ঝরনার একেবারে কোলে, ঠান্ডা পানি পায়ে মাড়িয়ে এসে থামলাম পাহাড়ের বুকের মাঝে, প্যাকেট থেকে একের পর বের করা হলো মোমবাতিগুলো। বসানো হলো নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর। মিনিট খানেক নীরবতা, সবাই চুপ, সবকিছুই যেন স্থবির।
এরপরই অপু, লিমন বড়ুয়া, বাবর আলী, বুনো, দিদার আর ফারহান ভাইয়ের হাতের ছোঁয়ায় জ্বলে উঠতে লাগল মোমের শিখা, একের পর এক। পুরো ঝরনাজুড়ে তিরতির করে চলছে হাজার খানেক মোমের আলোর নাচন! মুহূর্তেই কালো পাহাড় ভরে গেল সোনালি আলোর ছটায়, সে আলোতে প্রাণ পেল ঝরনার পানি। আকাশজুড়ে মিটমিট করতে হাসতে থাকা তারার দলও ম্রিয়মাণ হয়ে যায় টিমটিমে জ্বলতে থাকা এই মোমের শিখার কাছে। তোড়জোড় শুরু হলো ক্যামেরা নিয়ে। একসময় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এই আমাদের চোখের সামনেই গলে গলে থেমে গেল সোনালি আলোর নাচন। রাত তখন দেড়টা। আবার হেসেছে তারার মিছিল। আর আমরা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম তাঁবুর ঘরের ঠান্ডা পাথুরে বিছানায়, সারা রাত পৌষের শীত ছুরি চালাল কম্বলের বাইরে থাকা শরীরের অংশে। আর সবকিছু রয়ে-সয়ে আমরা চোখ বন্ধ করলাম গহিন অরণ্যে, তারার বিছানার ঠিক উল্টো দিকে।
পাহাড়ে ক্যাম্পিং করার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, কোনো অপচনশীল জিনিস (পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের প্যাকেট) ফেলে আসবেন না। এগুলো পুরো পরিবেশকে বিষিয়ে তুলবে। মলমূত্র এমন জায়গায় ত্যাগ করবেন, যেখানে পানির সংস্পর্শ থাকবে না, এতে করে ঝরনার পানি দূষিত হবে না। পাহাড়ে গিয়ে কাঁচা গাছ কাটবেন না, কোনো পশুপাখি হত্যা করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা—চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না, এটা জঙ্গলের প্রাণীদের আস্তানা, আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হয় তাদেরই। আর পাহাড়ে অনেক ঠান্ডা, কাজেই রাতে ক্যাম্পিং করতে গেলে গরম কাপড় অবশ্যই নিয়ে যাবেন, সঙ্গে একটা তাঁবু।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যেকোনো চট্টগ্রামের গাড়িতে উঠে সীতাকুণ্ডে নেমে পড়বেন, সেখানে এস কে এম জুট মিলের রাস্তা ধরে রেললাইন পার হয়ে ঝিরিপথে হাঁটা দেবেন পাহাড় লক্ষ্য করে। ৪০ মিনিট পর নিজেদের আবিষ্কার করবেন সুপ্তধারা ঝরনার নিচে, সেখান থেকে ডান পাশের পাহাড় বেয়ে উঠে যাবেন ঝরনার ওপরে। এবার জায়গা বেছে আরাম-আয়েশ করে তাঁবু ফেলে কাটিয়ে দিতে পারেন অসাধারণ একটা রাত।
১.
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’ কয়েক বছর আগে মহা ধুমধাম করে যে ‘ডিসি-১০’ মডেলের যে উড়োজাহাজটিকে চিরবিদায় জানিয়েছিল, যেটা আর কোনোদিন যাত্রীবাহী ফ্লাইট হিসেবে আকাশে উড়বে না, তারও কয়েক বছর আগে আমরা সেটার ককপিটে চড়ে ঢাকা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যাওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম।
এমন না যে লোকজন ইচ্ছা করলেই উড়োজাহাজের ককপিটে লাফ দিয়ে উঠে বসতে পারে কিংবা ককপিটের প্রবেশাধিকার সবার জন্যে উন্মুক্ত; কিন্তু বাংলাদেশ বিমানে অতি আপনজন প্রকৃতির পাইলট বন্ধুবান্ধব থাকায়, আমাদের মধ্যে কারও কারও আগে থেকেই বোয়িং অথবা ফকার অথবা এয়ারবাসের ককপিটে চড়ে আকাশ-ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। তবে ডিসি-১০-এর ককপিটে সেবার ওই অভিজ্ঞতাটি ছিল দুর্ধর্ষ, রোমাঞ্চপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর এবং প্রথম ও শেষ।
ডিসি-১০ সাধারণত পৃথিবীর এক মাথা থেকে আরেক মাথায় দূরপাল্লার রুটে চলাফেরা করে। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর মতো অল্প দূরত্বে ডিসি-১০ পেয়ে যাওয়াটা ছিল প্রায় হঠাৎ করে পাওয়া।
আমাদের অতি কাছের বন্ধু মুসা ইব্রাহীম পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত এভারেস্ট জয় করেছে। আমরা যাচ্ছিলাম তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নিয়ে আসতে।
(মুসা যখন এভারেস্ট অভিযানের যাওয়ার তহবিল সংগ্রহের জন্য মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে মাথা কুটে মরছিল, আমরা বন্ধু-বান্ধব ও চেনা-পরিচিতরা তখন নানা রকম ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে যে যার বাড়ির দুয়ারে শক্ত করে খিল এঁটে বসে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত যখন কাঠমান্ডু থেকে পাকা খবর এলো, মুসা সত্যি সত্যি এভারেস্ট জয় শেষ করে পায়ে হেঁটে কাঠমান্ডুর দিকে রওনা দিয়েছে; তখন আমরা যারা তার অতি ‘আপনজন’, তাদের মধ্য একাধারে আনন্দ, বিস্ময়, গর্ব, অহংকার ও পাপবোধের অনুভূতি হতে থাকল। মূলত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই আমরা স্থির করলাম, মুসাকে কাঠমান্ডু থেকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়ে আসা যাক, এতে যদি সে সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়।)
প্লেন ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে আমাদের ছোটখাটো দলটা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হলো। আমি ছাড়া দলের অন্য সদস্যরা যে যার পেশায় খ্যাতিমান, উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালী। সিমু নাসের ও জিয়া ইসলাম দেশের সবচেয়ে বড় পত্রিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক। ফখরুল আবেদীন মিলন একটা বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা (ব্যাংকিং সংক্রান্ত নানা রকম কাজকর্মে প্রায়ই তার সাহায্য-সহযোগিতা দরকার হয়, এ কারণে আমরা সব সময় তার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করি)।
মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট-জয় উপলক্ষে তার সংগঠন ‘নর্থ আলপাইন ক্লাব’ মুসার হাস্যোজ্জ্বল (ছোটবেলার) ছবি, এভারেস্টের চূড়া (হাতে আঁকা স্কেচ, যে এঁকেছে সে মনে হয় আগে কোনোদিন এভারেস্টের ছবি দেখে নাই, এ কারণে এভারেস্টের চেহারা হয়েছে থ্যাবরা বালুর ঢিবির মতো) আর জাতীয় পতাকা সংবলিত একটা টি-শার্ট প্রস্তুত করেছে। সিমু আর জিয়া শুকনা-পাতলা বলে তাদের গায়ে সেই টিশার্ট সবচেয়ে ভালো ফিট করেছে। আমি অর্ধেক শুকনা অর্ধেক মোটাসোটা, তারপরও কোনো রকমে শরীর মোচড়া-মুচড়ি করে টিশার্টের মধ্যে নিজেকে আঁটিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ফখরুল আবেদীনের অবস্থা হয়েছে সবচেয়ে করুণ। তার শরীর-স্বাস্থ্য একটু ভালোর দিকে, মিডিয়াম সাইজের টিশার্টের কারণে একটু পরে-পরে তার ভুঁড়ি বের হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিব্রত মুখে টিশার্ট টেনে টেনে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, সিকিউরিটি ইত্যাদি ঝামেলা শেষ করে আমরা প্রকাণ্ড ডিসি-১০ উড়োজাহাজের মধ্যে ঢুকে দেখি, আমাদের একেকজনের সিট পড়েছে একেক জায়গায়। আমি, জিয়া আর সিমু জানালার পাশে সিট চেয়েছিলাম, তা-ই পেয়েছি। কিন্তু মিলন ভাইয়ের সিট পড়েছে মাঝখানের সারিতে এবং তিনটা সিটের মাঝখানে। তার একপাশে একজন বয়স্ক মানুষ (তার ভয়াবহ ঠান্ডা লেগেছে, একটু পরপর বিকট হাঁচি দিচ্ছেন এবং টিস্যু দিয়ে নাক মুছছেন)। অন্যপাশে প্রায় বাচ্চা একটা ছেলে (প্লেনে উঠলে অনেকেই অসুস্থ বোধ করলে বমি করে দেয়, এই ছেলেটা দেখা যাচ্ছে প্লেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থবোধ করছে এবং বীভৎস আওয়াজ তুলে প্যাকেটে মাথা ঢুকিয়ে বমি করে যাচ্ছে)।
ফখরুল আবেদীন আমার কানে কানে বললেন, ‘আমার পক্ষে ওই সিটে বসা সম্ভব না। আমি টয়লেটে চলে যাচ্ছি। টয়লেটের জানালা দিয়ে প্লেনের টেকঅফ করা দেখব।’
আমিও তার কানে কানে অভয় দিয়ে বললাম, ‘মিলন ভাই, টেনশন নিয়েন না। আমাদের জন্যে বিরাট একটা সারপ্রাইজ আছে।’
‘কী সারপ্রাইজ?’ (কানে কানে ফিসফিস)
‘আমি আমাদের পাইলট বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। তিনি মনে হয় চেষ্টা করে দেখবেন, আমরা ককপিটে চড়ে যেতে পারি কিনা। যদি হয়, তাহলে প্লেনের পাইলট হয়তো আমাদের ককপিটে ডেকে নেবেন।’
ফখরুল আবেদীনের মধ্যে ভরসা পাওয়ার কোনো নিশানা দেখা গেল না। তিনি বললেন (কানে কানে), ‘ধুর, কখন ডাকে না ডাকে, ঠিক নাই। আমি কোনোদিন জানালা দিয়ে টেকঅফ করা দেখি নাই। আজ দেখতেই হবে।’
আমি বললাম (কানে কানে), ‘তাই বলে কমোডে বসে টেকঅফ দেখবেন? এটা কেমন কথা? কমোডের সিটে কি সিটবেল্ট থাকে? আমার সিট জানালার পাশে। আপনি আমার সিটে বসেন।’
আমাদের কানাকানি দীর্ঘায়িত হলো না। ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট রাগী রাগী গলায় নির্দেশ দিতে শুরু করেছেন, ‘প্লিজ। আপনারা যে যার সিটে বসে পড়েন। কেউ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, বসে পড়েন। প্লিজ।’
একজন বিমানবালা (সুন্দর চেহারা, তবে তার হৃদয়ের মতো মুখটাও মনে হয় শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি) বোর্ডিং পাস দেখে আমাকে জানালার পাশে একটা সিটে বসিয়ে দিলেন। আমি আশেপাশে উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করেও কাছাকাছি কোথাও জিয়া ইসলাম কিংবা সিমু নাসের কিংবা ফখরুল আবেদীনকে আর দেখতে পেলাম না।
সব যাত্রী উঠে যাওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই ডিসি-১০ উড়োজাহাজ নড়তে শুরু করল। ট্যাক্সিওয়ে ধরে কিছুক্ষণ চলার পর, রানওয়ের যে অংশ থেকে টেকঅফের জন্যে দৌড় শুরু করতে হয়, সেখানটাতে পৌঁছে কিছুক্ষণের জন্যে থামল।
উড়াল দেওয়ার জন্যে প্লেনের ইঞ্জিনের পুরো শক্তি দরকার হয়। পাইলটরা ককপিটে বসে যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করে প্লেনটাকে সেই পুরো শক্তি আদায় করার অবস্থায় নিয়ে আসতেই, আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে বিকট গর্জন শুরু হলো। সারা পৃথিবীতে একযোগে বজ্রপাত শুরু হলে যে আওয়াজ হবে, ডিসি-১০-এর তিনটা ইঞ্জিনের উৎপাদিত শব্দের কাছে সেটা অবশ্যই তুচ্ছ।
শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতিকায় প্লেনটাও থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। কাঁপুনির চোটেই যেখানে যত নাটবল্টু আছে, সব খুলে পড়ে যাওয়ার কথা। পাইলটরা তাই দেরি না করে তাদের যন্ত্রপাতি ধরে আবারও একটু নাড়াচাড়া করলেন। তখন ডিসি-১০ ভয়ানক ভঙ্গিতে নিজে কাঁপতে কাঁপতে এবং সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটতে শুরু করল। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, ঢাকা বিমানবন্দরে উপস্থিত প্রত্যেকে নিশ্চয়ই সেই ভূমিকম্প টের পাচ্ছে।
এর মধ্যে দেখি, যার যা দোয়া-দরুদ আর সুরা-কালাম জানা ছিল- কেউ বিড়বিড় করে, কেউ উচ্চস্বরে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকজনের কোলে অথবা পাশের সিটে ছোট বাচ্চাকাচ্চা ছিল, তারা ভয় পেয়ে গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেছে।
রানওয়ে ধরে কয়েক কিলোমিটার ছোটার পর, সামনের চাকা মাটি ছেড়ে কিছুটা ভেসে উঠতেই আমরা টের পেলাম, প্লেনের সামনের অংশ উঁচু হয়ে গিয়েছে। তখনই প্লেনের বিভিন্ন অংশে মুহূর্মুহু বিস্ফোরণ শুরু হলো। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, বিমানে আগে থেকে সন্ত্রাসীরা রিমোট কনট্রোল্ড অ্যাটম বোমা পেতে রেখেছিল, এখন সেগুলো রিমোট টিপে ফাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু ঘটনা হলো- আকাশে ওড়ার আগে পাখিরা যেমন ছোট্ট লাফ দেয়, ডিসি-১০-ও আলতো করে লাফ দিয়েছে। এতে যে প্রবল ঝাঁকুনি তৈরি হয়েছে, তাতে প্লেনের মধ্যে ঢিলেঢালা যা কিছু ছিল, সব খুলে পড়েছে। যেমন- মাথার ওপর কেবিন লাগেজ রাখার যে হোল্ডার, সবগুলোর ঢাকনা খুলে গিয়েছে। কয়েকজনের মাথায় টুকটাক জিনিসপত্র পড়ে মনে হয় টুকটাক ব্যথাও পাওয়ার কথা। ইকোনমি ক্লাসের সামনে যাত্রীদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য একটা বাক্সের মতো টেলিভিশন রাখা ছিল, সেটার কাভার খুলে পড়েছে। অবশ্য সেটার সামনে কেউ বসা ছিল না দেখে অল্পের জন্যে রক্ষা।
একবার আকাশে উড়ে গেলে চাকাগুলো কোনো কাজে লাগে না বলে পাইলটরা ককপিটে বসে কয়েকটা বোতাম টেপাটেপি করে চাকাগুলো ভাঁজ করে বিমানের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন। আকাশে উড়াল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ডিসি-১০-এর চাকাগুলো ভাঁজ করে রাখার সময় যে ভয়ানক আওয়াজ হতে লাগল, আমরা যাত্রীরা নিশ্চিত ধরে নিলাম- চাকাগুলো মোটেও প্লেনের পেটের মধ্যে ঢুকতে পারেনি, সেগুলো খুলে নিচে পড়ে গিয়েছে। কে জানে, কারও মাথার ওপর পড়েছে কিনা। আমরা তখন অনেক ওপরে উঠে গিয়েছি বলে ঠিক দেখতে পারা গেল না, চাকাগুলি কার মাথার ওপর পড়ল।
প্লেনটা আকাশের অনেকখানি ওপরে উঠে যাওয়ার পর দেখি বিধ্বংসী আওয়াজ আর কাঁপাকাঁপি একেবারেই কমে গিয়েছে। তারপরও সাবধানের মার নেই ভেবে আমরা সিটবেল্ট শক্ত করে বেঁধে যে যার সিটে পাথর হয়ে বসে রইলাম।
মনটাকে সহজ করার জন্যে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি, ওপর থেকে ঢাকা শহরটাকে গুগল ম্যাপের মতো দেখা যাচ্ছে। রাস্তাঘাট হয়ে গিয়েছে সরু ফিতার মতো। পিঁপড়ার সারির মতো লাইন দিয়ে গাড়িঘোড়া চলছে। মানুষজনকে অবশ্য আলাদা করে চেনার উপায় নেই।
অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা শহরের ঘিঞ্জি দালান-কোঠার স্তূপ পার হয়ে সবুজ মাঠ আর বিস্তীর্ণ জলাভূমি দেখা যেতে থাকে। আমরা যখন মাটির ওপর চলাফেরা করি, তখন শুধু রাস্তা আর আশেপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা দেখতে পাই। ওপর থেকে যা দেখা যাচ্ছে, তার প্রায় বেশিরভাগই পানি।
কিছুক্ষণ বাদে সুন্দর চেহারার বিমানবালা (যার হৃদয়ের মতো মুখখানিও পাথরের তৈরি) ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীদের মধ্যে এসে জানতে চাইলেন, ‘মিস্টার নওরোজ ইমতিয়াজ কে?’
আমি ভয়ে ভয়ে হাত তুললাম।
বিমানবালা হাসিমুখে এগিয়ে এলেন (তার মুখখানি এখন আর পাথরের তৈরি মনে হচ্ছে না, অবশ্য হৃদয়টা কী দিয়ে তৈরি কে জানে)। ‘স্যার, আপনি ক্যাপ্টেন এনামের বন্ধু?’
‘জি।’
‘দয়া করে আমার সঙ্গে আসবেন।’
‘কোথায়?’
‘এই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন স্যার আপনাকে ডেকেছেন।’
‘খুব ভালো। কিন্তু আমরা তো চারজন।’
‘আপনারা চারজনই আসবেন। অন্যরা কোথায়?’
আমি শতশত যাত্রীদের মধ্য থেকে জিয়া ইসলাম আর সিমু নাসেরকে খুঁজে বের করে আনলাম। বিমানবালার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম, ‘আরেকজনকে টয়লেটে পাবেন। উনি টয়লেটের জানালা দিয়ে প্লেন টেকঅফ করা দেখতে গিয়েছেন।’
বিমানবালা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘কিন্তু টয়লেটে তো কোনো জানালা নাই।’
২.
যারা কোনোদিন প্লেনের ককপিট সামনাসামনি দেখেনি, হঠাৎ করে কোনো প্লেনের ককপিটে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলে, তারা অবশ্যই বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।
ককপিটে ঢুকলেই প্রথমে যেদিকে চোখ যায়, সেটা হলো চারিদিকে শুধু যন্ত্রপাতি। কত রকম যে সুইচ, গুনে শেষ করা যাবে না। কত রকম যে ডায়াল, সেগুলোতে দুর্বোধ্য আর সাংকেতিক ভাষায় কী বলা হয়, পাইলটরা ছাড়া দুনিয়ার অন্য কারও তা জানার কথা না।
যাত্রীদের কেবিনের তুলনায় ককপিটে ভয়াবহ আলো। সামনের উইন্ডশিল্ড আর দু’পাশের বড় বড় জানালা দিয়ে প্রচণ্ড আলো আসছে। আমরা কিছুটা অন্ধকার থেকে এসেছি বলে চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা।
প্লেনের পেছনে বসে ইঞ্জিনের বিকট গর্জনে মাথা ধরে যাচ্ছিল, ককপিটে কোনো আওয়াজ নেই, প্রায় শুনশান নীরবতা। খুব খেয়াল করলে অবশ্য এক ধরনের যান্ত্রিক গুঞ্জন শোনা যায়।
চারপাশে আকাশটা অদ্ভুত নীল। বড় মায়াময়। আমরা মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশের যে নীল দেখি, এই নীল সেই রকম না, কেমন জানি অপার্থিব ধরনের। একটু নিচের দিকে মেঘ আর মেঘ। কিছু মেঘ চুপচাপ স্থির হয়ে আছে। আরেক দল দল বেঁধে ধীরেসুস্থে কোথায় জানি যাচ্ছে। তাদের দেখাচ্ছে মরুভূমিতে বেদুইনদের কাফেলার মতো। মাঝে-মধ্যে মেঘের ফাঁক দিয়ে মাটি দেখা যাচ্ছে- সবুজ অথবা বাদামি। হঠাৎ কোনো জলাভূমির পানি ঝিক করে উঠছে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে। খুব খেয়াল করে দেখলে অনেক নিচে আঁকাবাঁকা সরু ফিতার মতো গাঢ় রেখা যায়। ওগুলো নদী।
যাত্রীদের সিটের জানালা দিয়ে শুধু একটা দিক দেখা যায়। ককপিট থেকে দেখা যায় অন্তত তিনদিক। ডিসি-১০-এর বিশাল ককপিটে দাঁড়িয়ে আমাদের অনুভূতি হলো- আমরা আসলে একটা স্পেসশিপের মাস্টার কনট্রোল রুমে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের স্ক্রিনে যে গ্রহটা দেখা যাচ্ছে, আমরা এখন সেই গ্রহে অবতরণ করব। সাদা, নীল, বেগুনি আর অল্প অল্প বাদামি রঙ মিলিয়ে পৃথিবী নামক এই গ্রহটাকে দেখাচ্ছে অদ্ভুত রহস্যময়।
ককপিটে বসে প্লেন চালানোর জন্য পাইলটদের পাশাপাশি দুটো সিট। ক্যাপ্টেন বসে আছেন বামদিকে। ডানদিকে ফার্স্ট অফিসার। তার ঠিক পেছনে বসেছেন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার।
আমরা চারজন ককপিটের সামনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছি। টাইট-ফিটিংস কালো টিশার্টের কারণে আমাদের নিশ্চয়ই প্লেন হাইজ্যাকারদের মতো দেখাচ্ছে। কালো মুখোশ আর পিস্তল-টিস্তল থাকলে বোধহয় আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য হতো।
আমাদের ক্যাপ্টেন সাহেব একটু বয়স্ক ব্যক্তি। বুক পর্যন্ত সফেদ দাড়ি। ইউনিভার্সিটির রাগী প্রফেসরের মতো চেহারা। পথেঘাটে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে কেউ কোনোদিন বিশ্বাস করবে না, এই মানুষটা আস্ত একটা প্লেন নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ান।
আমরা চোখ বড় বড় করে বাইরের পৃথিবী, রঙবেরঙের মেঘমালা আর পাইলটদের কর্মকাণ্ড দেখছি, ক্যাপ্টেন সাহেব পেছনে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, ‘আমরা এখন ৩৪ হাজার ফুট অলটিচুডে আছি। স্পিড ঘণ্টায় সাড়ে তিনশ নট। আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এখানে দুটো সিট আছে। আপনারা চারজন তো? দুজন বসেন, দুজনকে একটু কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।’
আমি বুদ্ধিমানের মতো তাড়াতাড়ি ক্যাপ্টেনের ঠিক পেছনের সিটটা দখল করে ফেললাম। ককপিটে ঢোকার মুখেই যে ওয়াল-মাউন্টেড সিট, মুরব্বিজন বিবেচনায় সেখানে বসতে দেওয়া হলো ফখরুল আবেদীনকে। সিমু তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। জিয়া ইসলাম অতিশয় বিনয়ী হওয়ার কারণে সিট দখলের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে দরজাতেই দাঁড়িয়ে রইল।
ক্যাপ্টেন সাহেব ককপিটে তার দুই সহকর্মী- ফার্স্ট অফিসার আর ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমরাও নিজেদের বিস্তারিত পরিচয় দিলাম। কিছু হালকা কথাবার্তার পর ক্যাপ্টেন সাহেব বললেন, ‘অন্য এয়ারক্রাফটে কিন্তু এত বড় ককপিট থাকে না। ডিসি-১০-এর ককপিট অনেক বড়। আমরা তিনজন বসার পরেও দেখেন আরও দুটা এক্সট্রা সিট! আপনারা আরাম করে বসেন।’
আমি আর ফখরুল আবেদীন একটু নড়েচড়ে উঠে আরাম করে বসার ভঙ্গি করলাম।
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘এখনকার আধুনিক এয়ারক্রাফটে কিন্তু ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার দরকার পড়ে না। ডিসি-১০ যে আমলের, তখনকার দিনে লাগত। এখন তো টেকনোলজি উন্নত হয়েছে। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের কাজগুলো পাইলটরা নয়তো কম্পিউটারই করে ফেলে। বাংলাদেশ বিমানের অন্য এয়ারক্রাফট যেমন- এয়ারবাস বা বোয়িংয়ে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার নাই। ডিসি-১০ যেদিন থাকবে না, তাদের কাজও ফুরিয়ে যাবে। হা-হা-হা।’
ফখরুল আবেদীন সরল গলায় বললেন, ‘এই প্লেনটা কি সব সময় আপনারা তিনজনই চালান?’
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘না না। তা কেন হবে? ডিসি-১০ এয়ারক্রাফটের জন্যে কয়েকজন করে ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট অফিসার আর ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার আছেন। সারা মাসের রোস্টার বানানো থাকে, কার কবে-কখন ডিউটি, কার কবে অফ। আমরা সব সময় আগে থেকে জেনে আসি না, আজ কোন ফ্লাইটে কার সঙ্গে কার ডিউটি পড়বে।’
ফার্স্ট অফিসার সাহেব এবার ক্যাপ্টেনকে দেখিয়ে বললেন, ‘স্যারের সঙ্গে আজ দু’মাস পরে ফ্লাই করছি।’
ফখরুল আবেদীন সহানুভূতির গলায় বললেন, ‘একেক সময় একেকজন থাকলে প্লেন চালাতে অসুবিধা হয় না? আই মিন, আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে সমস্যা হয় না?’
ফার্স্ট অফিসার হাসলেন, ‘সমস্যা হবে কেন? সবাই এসওপি মানে, স্ট্যাটার্ন্ড অপারেটিং প্রসিডিউর আছে, সেটা ফলো করে। পাইলটদের একেকজন একেক দেশের বা একেক ভাষার হলেও, সমস্যা নেই। ককপিটে বসে সবাই এক ভাষাতেই কথা বলে। ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।’
ফখরুল আবেদীনের বিস্ময় শেষ হয় না। তিনি ককপিটের সামনের জটিল চেহারার ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল দেখিয়ে বললেন, ‘এই যে এত-এত যন্ত্রপাতি, কোনটা কী কাজে লাগে, এগুলো মনে রাখতে সমস্যা হয় না?’
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘এগুলোই তো ট্রেনিংয়ের সময় একটা একটা করে শেখানো হয়। ধরেন, আপনার গাল চুলকাচ্ছে, আপনি নিশ্চয়ই আয়নার সামনে গিয়ে কোথায় চুলকাচ্ছে, সেটা দেখে তারপর চুলকাবেন না? জায়গামতো অটোমেটিক আঙুল চলে যাবে। ঠিক না?’
আমরা মাথা নাড়লাম। ঠিক। ঠিক।
ব্যাপারটা প্রমাণ করার জন্যে তখনই আমার গালের দু’পাশে একটু একটু চুলকানির অনুভূত হতে লাগল। ক্যাপ্টেনের কথামতো আমার আঙুলও সত্যি সত্যি যথাস্থানে চলে গেল।
‘আমাদের যখন ট্রেনিং হয়, তখন পুরো ব্যাপারটা এমনভাবে ভাজা ভাজা করা হয়, চোখ বন্ধ করে হাত বাড়ালেও ঠিক জায়গামতো হাত চলে যাবে।’
ক্যাপ্টেন সাহেবের চেহারা এমনি এমনি ইউনিভার্সিটির প্ফেসরদের মতো হয়ে ওঠেনি। তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে ককপিটের ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি, সুইচ, লিভার, ডায়ালের সঙ্গে আমাদের পরিচিতিমূলক ক্লাস নিতে লাগলেন।
এসব ইন্সট্রুমেন্টের কোনোটাতে জানা যাচ্ছে- প্লেন এখন কত উচ্চতায় আছে, কোনোটা দেখাচ্ছে- প্লেনের গতি কত, কোনোটাতে জানা যাচ্ছে- আশেপাশে আর কোনো বিমান আছে কিনা, থাকলে কত দূরে। সামনে কোথাও ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে কিনা, পাহাড়-পর্বত-নদী-জলাশয় কোথায় কী আছে, ফুয়েলের কী অবস্থা, বাতাসের গতি কত, তাপমাত্রা কেমনÑ এ রকম দরকারি আর বিচিত্র নানা তথ্য-উপাত্ত এক নিমিষেই জানা যাচ্ছে।
ক্যাপ্টেন বলে যাচ্ছেন, ‘ডিসি-১০ তো অনেক পুরনো এয়ারক্রাফট। এটার ইন্সট্রুমেন্ট বলতে গেলে প্রায় অ্যানালগ। এখনকার আধুনিক এয়ারক্রাফটে সব ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট। ম্যাপ বা চার্টের জন্যে মোটা মোটা বই হাতরাতে হয় না, একটা ইএফবি মানে ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ব্যাগ নয়তো আইপ্যাডে ইএফবি অ্যাপস থাকলেই কাজ চলে যায়।’
ফখরুল আবেদীন ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ভাগ্যিস পাইলট হই নাই। আমাকে দিয়ে কোনোদিন এসব মনে রাখা সম্ভব ছিল না।’
ফার্স্ট অফিসার হেসে বললেন, ‘ভাইবেন না, একবার যা শিখলেন, সারা জীবন ধরে সেটাই মনে রাখতে হবে। এক মডেল থেকে আরেক মডেলে গেলেও নতুন করে শিখতে হবে। তার আগে পুরনো বিদ্যা মাথা থেকে মুছে ফেলতে হবে। ধরেন, আমি এখন ডিসি-১০-এর ফার্স্ট অফিসার, ডানদিকে বসি। আমাকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, ডানদিকে বসলে কীভাবে কী করতে হবে। আমি যখন ডিসি-১০-এর ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রমোশন পাব, তখন বামদিকে বসব। তখন আবার বামদিকের জন্য আবার ট্রেনিং নিতে হবে।’
ক্যাপ্টেন যোগ করলেন, ‘আবার এমন যদি হয়, ডিসি-১০ থেকে কেউ বোয়িং অথবা এয়ারবাসে যাচ্ছে, তখনও তাকে মাথা থেকে ডিসি-১০ তাড়াতে হবে, তারপর নতুন এয়ারক্রাফটের ওপর ট্রেনিং।’
জিয়া ইসলাম এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে বলল, ‘ট্রেনিংটা যে প্লেনে হয়, সেটা কী রকম? একই প্লেন? মানে যাত্রী থাকে?’
‘একই তো অবশ্যই। তবে শুরুতেই সত্যিকারের এয়ারক্রাফট না। প্রত্যেক মডেলের জন্যে আলাদা আলাদা সিমুলেটর আছে। সিমুলেটর হচ্ছে বিশেষভাবে বানানো থ্রিডি ভিশন আর রিয়েলিস্টিক মোশনের একটা চেম্বার। সবকিছু একদম সত্যিকারের ককপিটের মতো। ইন্সট্রুমেন্ট হুবহু এক। আকাশে উড়বে না, তবে একই রকম সিচুয়েশন তৈরি করা যাবে। সেভাবেই প্রোগ্রামিং করা আছে। সত্যি সত্যি টেকঅফ-ল্যান্ডিং বা ফ্লাই করার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়, থ্রিডি ভিশনে আপনি তাই দেখবেন। রিয়েলিস্টিক মোশনে আপনি তাই অনুভব করবেন। আবার চাইলে বিশেষ সিচুয়েশনও ক্রিয়েট করা যাবে। ধরেন, আপনার মনে হলো, ফ্লাই করে টুইন টাওয়ারের ওপর গিয়ে পড়বেন। সেটা সিমুলেটরে সম্ভব। যতবার খুশি, ততবার। কিন্তু মজা হলো, আপনার কিছু হবে না। হা-হা-হা। সিমুলেটরে পাস করলে, তবেই সত্যিকারের এয়ারক্রাফট।’
ফার্স্ট অফিসার হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে সামনের রাডারের দিকে তাকিয়ে আমাদের বললেন, ‘আমাদের পাশ দিয়ে আরেকটা প্লেন ক্রস করছে। বামে তাকালেই দেখবেন, তাড়াতাড়ি।’
আমরা সবাই বামে তাকালাম। একটু নিচুতে অনেক দূর দিয়ে সাঁ করে একটা মিসাইলের মতো কী জানি ছুটে যেতে দেখা গেল।
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের সামনে রেডিও খড়খড় করে উঠতে, তিনি কথা বলতে শুরু করলেন। ওপাশে একটা নারীকণ্ঠ। কী কী জানি কথাবার্তা হলো। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হেসে বললেন, ‘ওই ফ্লাইটটা দিল্লি থেকে ব্যাংকক যাচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া।’
এবার ক্যাপ্টেন বললেন, ‘এবার ডানদিকে তাকান। মাথার ওপর দিয়ে আরেকটা যাবে।’
সত্যি সত্যি আরেকটা বিমানকে দেখা গেল আমাদের কিছুটা ওপর দিয়ে আড়াআড়ি ডানদিক থেকে বাঁ-দিকে চলে গেল।
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘ওটা বোয়িং ট্রিপল সেভেন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স।’
বিমান চালানোর নিয়মকানুন বিষয়ে ক্যাপ্টেন সাহেবের চমৎকার বক্তৃতা আর ককপিটে বসে থাকার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের চারজনের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জন্ম নিল। যা দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা খুব কঠিন কিছু না। আরও কয়েকবার সামনা-সামনি দেখার সুযোগ পাওয়া গেলে, এরপর নিজেরা একটু চেষ্টা করে দেখলে, বলা যায় না, প্লেন চালানোর কাজটা সবাই শিখেও ফেলতে পারি।
বিমানবালা (আগেরজন না, ইনি একটু বয়স্কা) ট্রে-তে করে প্রচুর খাবার-দাবার নিয়ে এসেছেন। সুস্বাদু খাবারের গন্ধে পুরো ককপিট মৌ-মৌ করছে। জটিল-দর্শন যন্ত্রপাতিগুলো না থাকলে অবলীলায় ককপিটটাকে এ মুহূর্তে ছোটখাটো রেস্তোরাঁ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যেত। আমরা কেউ সমুচায় কামড় দিয়ে, কেউ চামচে করে একটু ফিরনি মুখে দিয়ে, কেউ কলার খোসা ছিলতে ছিলতে পাইলট সাহেবের লেকচার শুনছি।
আমি বসেছি বাঁ-দিকের জানালা ঘেঁষে। রোদটা সরাসরি আমার মুখে এসে পড়ছে। রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ক্যাপ্টেন সাহেবকে দেখেছিলাম, তার বাঁ-পাশের জানালার পাশে ছায়ার জন্যে একটা সবুজ শেডের সান-ভিযর নামিয়ে রেখেছেন। সূর্যের অবস্থান একটু সরে যাওয়ায় সেটা অবশ্য এখন তার দরকার হচ্ছে না। তিনি কথা বলায় ব্যস্ত, কাজেই আমি খুব সাবধানে সানভিযরটা আমার কাছাকাছি সরিয়ে আনতে টানাটানি করতেই দেখি, জিনিসটা তার হুক থেকে খুলে আমার হাতে চলে এসেছে।
ঘটনা এখানেই শেষ না।
আমি জিনিসটা আবার হুকের সঙ্গে আলতো করে আগের মতো আটকে দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে পরপর কয়েকটা ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটল। জানালার পাশে কনুইয়ে ভর রেখে আমি একটু বাঁ-দিকে ঝুঁকতেই, সেখানকার শেলফে একটা মোটা বই রাখা ছিল, সেটা আমার সিটের ফাঁকে পড়ে গেল। আমি সেই পতন ঠেকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মনে হয় সিমু নাসেরের গায়ে একটু ধাক্কা লেগে গেল। সিমুর হাতে ছিল চায়ের কাপ। চা যেন ছলকে না ওঠে, সে জন্যে সে চায়ের কাপটা উঁচু করে ধরল। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না, অল্প কয়েক ফোঁটা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের গায়ে পড়ল। তিনি লাফ দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সিটবেল্ট বাঁধা থাকায় তিনি চট করে নড়তে পারলেন না। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের কাছাকাছি বসে ছিলেন ফখরুল আবেদীন। তার হাতে ছিল পায়েসের বাটি। ধাক্কা খেয়ে সেই বাটি উল্টে গেল। পাশেই হাঁটু গেড়ে বসে ছিল সিমু নাসের। পায়েসের কিছু অংশের ভাগ পেল তার টিশার্ট।
একটা যাত্রীবাহী বাসের ড্রাইভারের কাছাকাছি এসব ঘটনা ঘটলে, বাসটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের ধান ক্ষেতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকত এবং এইসব তুলকালামের কারণে ডিসি-১০ প্লেনটারও আকাশ থেকে দুম করে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ার কথা ছিল। নিদেনপক্ষে একটু কেঁপে উঠলেও হয়তো পারত।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না। যেভাবে উড়ছিল, সেভাবেই উড়তে থাকল।
আমার তিন সহযাত্রী আমার দিকে যেভাবে চোখ গরম করে তাকাচ্ছে। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে, সন্দেহ নেই তারা আমাকে ঘাড় ধরে আকাশের মাঝখানে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত।
তবে ক্যাপ্টেন সাহেব যেহেতু শুধু প্রফেসরদের মতো দেখতেই নন, তার হৃদয়টাও ভারী নরম। তিনি শান্ত মুখে বললেন, ‘টেক ইট ইজি। আপনাদের লাগেনি তো?’
আমরা প্রত্যেকে খুব তাড়াতাড়ি কয়েকবার মাথা নেড়ে ভাব করলাম, লাগার প্রশ্নই আসে না।
সিমু নাসের ব্যাপারটা হালকা করার জন্যে বলল, ‘প্লেন চালানো তো সোজা দেখছি। বসে বসে গল্প করা আর খাওয়া-দাওয়া করা। পাইলটদের কিছুই করতে হয় না।’
ক্যাপ্টেন সাহেব বললেন, ‘এখন অটো পাইলটে চলছে। কোর্স সেট করে দেওয়া আছে। জায়গামতো পৌঁছে যাবে। গ্রাউন্ডে বসেই ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট কম্পিউটার বা এফএমসি-তে প্রোগ্রাম করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দরকার হলে এখনও যেভাবে খুশি প্রোগ্রাম বদলে দেওয়া যাবে।’
‘বাহ। তাহলে পাইলটের দরকার কী? অটোপাইলটে দিয়ে বসে থাকলেই হয়।’
‘অটোপাইলট দিয়ে টেকঅফ হবে না। ল্যান্ডিং হবে না।’
‘আপনার সামনে স্টিয়ারিংয়ের মতো দেখতে ওই জিনিসটা কী?’
‘কনট্রোল কলাম। এটা দিয়েই তো পুরো জাহাজ কনট্রোল করা হয়। চালাতে চান?’ ক্যাপ্টেন সাহেব ভুরু নাচালেন।
সিমু নাসেরের ভাবভঙ্গি দেখে এতক্ষণ মনে হচ্ছিল, সে প্লেন চালানোর বিষয়টা প্রায় শিখে গিয়েছে। সত্যিকারের প্লেন না হোক, সিমুলেটরে নিয়ে বসিয়ে দিলে সে নিশ্চয়ই টুইন টাওয়ারে গিয়ে ছোটখাটো ধাক্কা দিতে পারবে। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাহেবের প্রস্তাব শুনে তার ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হলো। আরও কয়েকবার সাধাসাধি করা হলে, সে বোধহয় মানইজ্জতের খাতিরে রাজিও হয়ে যেতে পারত।
কিন্তু আমরা বাকি তিনজন নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার খাতিরে প্রতিবাদ করে উঠলাম, ‘না না। আগে আমাদের নামিয়ে দেন।’
ক্যাপ্টেন সাহেব মুচকি হেসে তার জটিল জটিল ইন্সট্রুমেন্টগুলোর মধ্যে একটা সুইট অফ করে দিয়ে কনট্রোল কলাম শক্ত হাতে ধরলেন, ‘এই দিলাম অটোপাইলট অফ করে। কনট্রোল এখন আমার হাতে। এই দেখেন ডাইভ দিচ্ছি।’
ক্যাপ্টেন সাহেব কনট্রোল কলাম সামনের দিকে ঠেলে দিতেই ডিসি-১০ নাক নিচু করে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। আমরা এতক্ষণ সামনের জানালা দিয়ে আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম, হঠাৎ সেখানে পৃথিবীর অর্ধ-গোলাকৃতি অংশটা ফুটে উঠল।
‘এই দেখেন, এবার ওপরে উঠে যাচ্ছি।’
ক্যাপ্টেন সাহেব কনট্রোল কলাম নিজের দিকে টানলেন। ককপিটের সামনের জানালায় পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে গিয়ে সেখানে নীল আকাশ ভেসে উঠল।
ক্যাপ্টেন সাহেব অবশ্য কনট্রোল কলাম ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে প্লেনটাকেও ডানে-বাঁয়ে কাত করিয়ে দেখালেন। তারপর আবার অটোপাইলটের সুইচ অন করে দিলেন।
সিমু নাসের বলল, ‘প্লেনটাকে উল্টা করে ফেলেন না প্লিজ। ওই যে সিনেমায় যেমন দেখায়, ফাইটার প্লেনগুলো উল্টা হয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে যাচ্ছে।’
ক্যাপ্টেন সাহেব অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ‘ওটা ফাইটার প্লেনেই সম্ভব। এটা প্যাসেঞ্জার প্লেন। এটা উল্টানো দূরে থাক, একটু বেশি অ্যাঙ্গেলে টার্ন করলেই যাত্রীদের খবর হয়ে যাবে।’
আমরাও যেহেতু এই বিমানের যাত্রী, কাজেই নিজেদের খবর হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ঘটানোর ঝুঁকি নিতে আমরা কেউ রাজি হলাম না।
৩.
আমাদের উড়োজাহাজটা মনে হয় নেপালের সীমানায় ঢুকে পড়েছে। নিচে রুক্ষ চেহারার পাহাড়-পর্বত দেখা যাচ্ছে।
ক্যাপ্টেন সাহেব হাত উঁচু করে একদিকে নির্দেশ করে বললেন, ‘ওই দিকে এভারেস্ট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে, আপনারা দেখতে পেতেন।’
আমরা উঁকিঝুকি দিয়ে নির্মল আকাশ ছাড়া অবশ্য কিছু দেখতে পেলাম না।
‘নিচে তাকান। সরু রূপালি ফিতার মতো কী দেখা যায় বলেন তো?’
আমরা সমস্বরে বললাম, ‘নদী। নদী।’
‘নদী তো বুঝলাম। কী নদী?’
আমরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। ক্যাপ্টেন বললেন, ‘ওটা গঙ্গা। এটাই ভারতের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে পড়েছে। নাম হয়েছে পদ্মা।’
ফার্স্ট অফিসার সাহেব রেডিওতে কার সঙ্গে জানি কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। ইংরেজি ভাষা, কিন্তু এত বেশি টেকনিক্যাল শব্দের ছড়াছড়ি, আমরা একবর্ণও বুঝতে পারলাম না।
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা কাঠমান্ডুর কাছাকাছি চলে এসেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ল্যান্ড করব। আপনারা চারজন তো একসঙ্গে ককপিটে থাকতে পারবেন না। দু’জন পারবেন, দু’জনকে চলে যেতে হবে। যারা থাকবেন, তাদের অবশ্যই সিটবেল্ট বাঁধতে হবে। ল্যান্ডিংয়ের সময় কারও সিটবেল্ট ছাড়া চলবে না।’
জিয়া ইসলাম আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র, অমায়িক, আত্মত্যাগী, বিনয়ী এবং বিবেচক। একটু আগে সে তার বিনয় দেখিয়েই সিটে বসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবারও সে তার ভদ্রতা, অমায়িকতা, আত্মত্যাগ, বিনয় ও বিবেচনাবোধের পরিচয় দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে নিজের সিটের দিকে রওনা হলো।
আমি টুক করে নিজের সিটবেল্ট বেঁধে নিয়ে বাঁ-দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগের সঙ্গে নিচে নেপালের কঠিন শিলামণ্ডিত ভূপ্রকৃতি অবলোকন করতে লাগলাম।
ফখরুল আবেদীন সিটে বসে ছিলেন, তিনি পেছন থেকে সিটবেল্ট টেনে এনে কোমরে বেঁধে ফেললেন। সিমু নাসেরের এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার বিশেষ ইচ্ছা ছিল না। সে মরিয়া হয়ে ফখরুল আবেদীনের কোলের ওপর বসে পড়ল।
ক্যাপ্টেন সাহেব পেছনে তাকিয়ে খুবই বিব্রত হয়ে বললেন, ‘আহা। সিট তো মাত্র দুটো। আরেকটা সিট থাকলে না-হয় হতো। কিন্তু সিটবেল্ট তো বাঁধতেই হবে।’
ফখরুল আবেদীন পেছন থেকে দু’হাত দিয়ে সিমুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। এই যে সিমুর সিটবেল্ট বেঁধে ফেললাম। আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’
সিমু বলল, ‘হ্যাঁ। অসুবিধা হলে ল্যান্ড করার পর পেছনে চলে যাব। ল্যান্ডিংটা ককপিটে বসে দেখতে চাই।’
ক্যাপ্টেন সাহেবের চেহারায় সত্যি সত্যি একরাশ বেদনা এসে ভর করেছে, ‘দুঃখিত। এভিয়েশন রেগুলেশন মানতেই হবে।’
অতএব সিমু নাসের আর ফখরুল আবেদীনকে নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতায় আসতে হলো। ফখরুল আবেদীন বিষন্ন ভঙ্গিতে প্যাসেঞ্জার কেবিনের পথ ধরলেন।
ক্যাপ্টেন সাহেব ল্যান্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ককপিটের জটিল-দর্শন কনসোলের শতশত ইন্সট্রুমেন্টের ওপর তার হাত বিদ্যুতের মতো নেচে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।
ডিসি-১০ এরই মধ্যে অনেকখানি নিচে নেমে এসেছে। পাহাড়-পর্বতের চূড়াগুলো খুব এখন খুব কাছাকাছি। একটু এদিক-ওদিক হলেই প্লেনের সঙ্গে ঘষা খেয়ে যাবে, এমন অবস্থা। এরই মধ্যে হঠাৎ কোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে চারপাশ অদৃশ্য করে ফেলল। শুধু সাদা আর সাদা। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। মেঘের মধ্যে পড়ে বিশাল প্লেনটা জোরে জোরে কয়েকবার কেঁপে উঠল।
ক্যাপ্টেন পেছনে না তাকিয়ে বললেন, ‘এই মেঘটা সব সময়ই থাকে। একটু রিস্কি। এখনই পার হয়ে যাব।’
বলা মাত্র মেঘ সরে গেল। একদম সামনেই বিশাল এক পর্বত দেখি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘বুঝলেন। কাঠমান্ডু শহরটা আসলে বিশাল একটা উপত্যকা। চারিদিকে পাহাড়। ওই যে সামনে পাহাড় দেখছেন, ওটা পার হয়েই আমরা বিশাল ডাইভ দেব। দিয়েই নেমে যাব। ওই পাহাড়টা পার হওয়ার সময় ডিসট্যান্স খুব সামান্য থাকবে। সাতশ ফুটের মতো। দেখবেন, কেমন ট্যাঁ-ট্যাঁ করে।’
ক্যাপ্টেনের বক্তব্যের প্রমাণ দিতেই একটু পর ককপিটের মধ্যে তারস্বরে অ্যালার্ম বাজতে শুরু করল। ক্যাপ্টেন বললেন, ‘পাহাড়-চূড়াটার সঙ্গে ডিসট্যান্স কমে আসছে। সেটাই অ্যালার্ট করছে। চাইলে বন্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু বন্ধ করব না।’
ডিসি-১০ পাহাড়-চূড়াটা পার হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য অ্যালার্ম থেমে গেল। আকাশের অনেক ওপরে থাকার সময় মনে হচ্ছিল, প্লেনটা বুঝি খুব ধীরে-ধীরে চলছে। নিচে নামতে শুরু করার পর দেখা গেল, ভয়ানক গতিতে সাঁ-সাঁ করে সব কিছু সরে যাচ্ছে। পর্বতের চূড়া অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামনের জানালায় কাঠমান্ডু শহরটা ভেসে উঠল। ছোটছোট অসংখ্য দালানকোঠা, আঁকাবাঁকা পথঘাট।
ক্যাপ্টেন বলে যাচ্ছেন, ‘ল্যান্ড করাই সবচেয়ে কঠিন। আজ পর্যন্ত যতগুলো এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে ফাইনাল অ্যাপ্রোচের সময়, এয়ারপোর্টের কাছাকাছি। যে পাহাড়টা পার হয়ে এলাম, সেটা খুবই রিস্কি। একবার পিআইএ-র একটা এয়ারবাস এথ্রি-১০ সেটার চূড়ায় ক্রাশ করেছিল।’
আমাদের বুক শুকিয়ে গেল। ক্যাপ্টেন সাহেবকে এখন আর আগের মতো হাসিখুশি দেখাচ্ছে না। তার মুখচোখ গম্ভীর হয়ে উঠেছে। তাকে এখন দেখাচ্ছে সত্যিকারের পাইলটদের মতো। তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে ইন্সট্রুমেন্ট কনসোলের যন্ত্রপাতি টেপাটেপি করছেন। ফার্স্ট অফিসার আর ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের চোখেমুখেও সিরিয়াস ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, প্লেনের কলকবজা বুঝি সব বিকল হয়ে গিয়েছে। একটু পরেই বোধহয় প্যারাশুট নিয়ে লাফ দিতে বলা হবে।
আমাদের প্লেনটা খুব নিচু দিয়ে ডানে-বাঁয়ে কয়েকবার কাত হয়ে চক্কর খাওয়ার পর সোজা হতেই দেখি, সামনে একটা সরলরেখা দেখা যাচ্ছে।
রানওয়ে!
ক্যাপ্টেন সাহেব কনট্রোল কলাম ধরে নাড়াচাড়া করে খুব তাড়াতাড়ি প্লেনটাকে রানওয়ে বরাবর নিয়ে এলেন। সমতল এলাকায় এই কাজটা করার জন্যে মনে হয় একটু বেশি সময় পাওয়া যায়। কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে সেই সুযোগ সামান্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমাদের প্লেনটা রানওয়ের খুব কাছাকাছি নেমে গেল। ক্যাপ্টেন সাহেব বোতাম টিপে চাকাগুলো ভাঁজ খুলে বের করে দিয়েছেন।
ককপিটের মধ্যে একটা যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর খুব বিচলিত হয়ে দশের ঘরের নামতা উল্টোদিক থেকে পড়তে শুরু করেছে।
‘হানড্রেড… নাইন্টি… এইটি… সেভেনটি… সিক্সটি…’
আমরা ককপিটের অতিথিরা নিঃশ্বাস আটকে অবতরণ প্রক্রিয়া দেখছি। প্রথমে পেছনের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করল, পর মুহূর্তে সামান্য লাফিয়েই উঠল, তারপর মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে প্লেনটা রানওয়েতে নেমে ভয়ানক গতিতে ছুটতে লাগল। আকাশে থাকতে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না, কিন্তু ল্যান্ডিংয়ের সময় এত বিশাল উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাটাই দেখা গেল সবচেয়ে দুরূহ। একবার ডানে চলে যেতে যায় তো পর মুহূর্তেই বামে চলে যেতে চায়। ক্যাপ্টেন সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে কনট্রোল কলাম শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন। তার চোখ বিস্ফারিত, যেন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে।
প্রথমে মনে হচ্ছিল, এত বড় উড়োজাহাজটাকে বোধহয় কোনোদিন থামানো যাবে না। এক সময় রানওয়ে ফুরিয়ে যাবে, তারপর আমরা শেষ মাথায় গিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে কয়েক হাজার ফুট নিচে পড়ে যাব। সেই সঙ্গে আমরাও আলু-ভর্তা হয়ে যাব। কিন্তু প্লেনটা রানওয়ের সমান্তরালে ঠিকমতো বসে যেতেই ক্যাপ্টেন সাহেব আর তার ফার্স্ট অফিসার সর্বশক্তি দিয়ে দু’পায়ে ব্রেক প্যাডেল চেপে ধরেছেন। তাতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গতি একদম কমে এলো।
ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাটি করে আগেই জেনেছিলাম, কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট গোটা পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটা বিপজ্জনক এয়ারপোর্টের মধ্যে একটা। আমাদের দেশের পাইলটরা সীমাহীন দক্ষতায় প্রতিদিন সেখানে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডিসি-১০-এর মতো প্রাগৈতিহাসিক উড়োজাহাজ নিরাপদে নামান এবং ওঠান। তাদের এই সীমাহীন দক্ষতার সামান্য নমুনা চাক্ষুষ করে আমাদের বুক গর্বে দশ হাত ফুলে উঠল।
চার.
অবতরণ করে ফেলার পর অবশ্য আবার সেই সাদাসিধে দৃশ্য। প্লেনটা ধীরে-সুস্থে ট্যাক্সিয়িং করে এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ভবনের সামনে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ককপিটের তিনজন ক্রু ব্যস্ত ভঙ্গিতে একের পর এক সুইট টেপাটেপি করে যাচ্ছেন। ফার্স্ট অফিসারকে দেখা গেল, বিজাতীয় ভাষায় রেডিওতে কনট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছেন। ক্যাপ্টেন এখনও ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল নিয়ে ব্যস্ত। ইঞ্জিনের আওয়াজ কমে এসেছে। এক ধরনের ভাইব্রেশন টের পাওয়া যাচ্ছিল, সেটা এখন বন্ধ।
বিমানবালা (এবারও সেই বয়স্কজন) এসে জানতে চাইলেন, ‘স্যার। গেট ওপেন করে দেব?’
ক্যাপ্টেন তাকে হ্যাঁ-সূচক মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে আরও কী কী জানি সুইচ টিপে বন্ধ করে দিলেন।
আমি বাঁ-পাশের জানালা দিয়ে একটু পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এয়ারপোর্টের লোকজন এরই মধ্যে বিশাল যান্ত্রিক সিঁড়ি এনে প্লেনের দরজার সঙ্গে ফিট করে দিয়েছে। বাইরে যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের সবার গায়ে কয়েক প্রস্থ গরম কাপড়। কাঠমান্ডুতে মনে হয় ব্যাপক ঠান্ডা। ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় তো এসির মধ্যে বসেও দরদর করে ঘামছিলাম।
ক্যাপ্টেনও কিছুক্ষণ পর বাঁ-দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার, গেট খুলছে না কেন?’
এর মধ্যে বিমানবালা আপু আবার ককপিটের দরজায় উদয় হলেন। ‘স্যার। মনে হয় সমস্যা হয়েছে। গেট খুলছে না।’
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘কী সমস্যা? গেট খুলবে না কেন? দেখো জ্যাম হয়ে আছে কিনা।’
আমাদের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এতক্ষণ তেমন কথাবার্তা বলেননি। তিনি তার ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়। এয়ার প্রেশার লেভেল করে দিয়েছি। খুলে যাওয়ার কথা।’
ক্যাপ্টেন সাহেব আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বুঝলেন, কেবিনের এয়ার প্রেশার আর বাইরের এয়ার প্রেশার সমান না হলে গেট খুলবে না। ঢাকা শহর তো সি-লেভেলের কাছাকাছি। কিন্তু কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট চার হাজার চারশ ফুট উঁচুতে। আমরা কেবিনের মধ্যে পাঁচ থেকে আট হাজার ফুটের এয়ার প্রেশার মেইনটেইন করি। এখন এটা কমাতে হবে।’
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার তার সামনের প্যানেলে পাশাপাশি দুটো ডায়াল দেখিয়ে বললেন, ‘এখানে তো দেখাচ্ছে দুটোই লেভেলে আছে। এই যে এটা বাইরের এয়ার প্রেশার, এটা কেবিন এয়ার প্রেশার। দুটোই সমান।’
ফার্স্ট অফিসার ডানপাশ থেকে চাপা গলায় বললেন, ‘তিরিশ-চল্লিশ বছর বয়স হয়েছে। আর কত! জাদুঘরে রাখার টাইম হয়ে গেছে।’
ক্যাপ্টেন বললেন, ‘প্রেশারাইজেশনে গোলমাল মনে হচ্ছে। আপনার ডায়াল ঠিক আছে তো? চেক করেন আবার।’
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার মানুষটা মনে হয় কম কথা বলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে স্ক্রু ড্রাইভার বের করে দেয়াল-জোড়া ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের একটা অংশের কয়েকটা স্ক্রু খুলে ফেললেন। তাতে বাইরের কাভারটা আলগা হয়ে খুলে এলো। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার সেটা একপাশে সরিয়ে রেখে ডায়ালের দিকে তাকিয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘দেখলেন কারবারটা! আমি বাইরে থেকে লিভার ঘুরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ভেতরে ঘোরেনি।’ বলেই তিনি ভেতরের লিভারটা ঘুরিয়ে নির্দিষ্ট অবস্থানে নিয়ে এলেন।
সিমু নাসের তার কান চেপে ধরে বলল, ‘আমার তো কান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘হ্যাঁ। তাই হওয়ার কথা। কেবিন প্রেশার এবার কমে যাচ্ছে। আপনার কানের ভেতরের এয়ার প্রেশারের সঙ্গে এখনও অ্যাডজাস্ট হয়নি। এ জন্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।’
ক্যাপ্টেন সাহেব বিমানবালাকে বিজয়ীর ভঙ্গিতে বললেন, ‘এবার চেষ্টা করেন। এখন গেট খুলে যাওয়া উচিত।’
সিমু বলল, ‘যদি না খোলে, তাহলে কি তালা-চাবিঅলাকে খবর দিতে হবে? নাকি ভাঙতে হবে?’
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হো-হো করে হেসে উঠলেন, ‘না, তাহলে আমরা আবার ঢাকায় ফিরে যাব।’
এক মিনিটের মাথায় দেখা গেল, গেট খুলে গিয়েছে। যাত্রীরা লাইন ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। প্রায় সবাই নেমে যাওয়ার পরে, ফখরুল আবেদীন আর জিয়া ইসলামকে দেখা গেল ককপিটের দরজায় (হিংসা ও ঈর্ষায় তাদের চোখ ছোট ছোট হয়ে গিয়েছে)। তারা আমাদের দেখে অত্যন্ত শীতল গলায় বললেন, ‘কী ভাই নামবেন না? ঢাকায় ব্যাক করবেন নাকি?’
আমরা ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট অফিসার আর ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে করমর্দন করে ককপিট থেকে বেরিয়ে এলাম। বাইরে হিমহিম ঠান্ডা আবহাওয়া। টিশার্ট পরে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না মনে হয়।
কাঠমান্ডুর আকাশে বিকেলের রোদটা বড় নিরুত্তাপ, কিন্তু বেশ চড়া। সেই সোনালি আলোয় বাংলাদেশ বিমানের ধবধবে সাদা ডিসি-১০ উড়োজাহাজটাকে অদ্ভুত রহস্যময় দেখাচ্ছে।
দিগন্তব্যাপী সুনীল আকাশ, আকাশমুখী দীর্ঘ ঘন ঝাউবন, সবুজ তৃণভূমির বুকে জেগে থাকা সোনাঝরা বালুকা বেলা, ঝিনুক বাঁধানো সৈকত সোনাদিয়া দ্বীপ।
এই দ্বীপে হেমন্তের পূর্ণিমায় তাঁবুবাস যেন স্বপ্নের মতোই ছিল। স্বপ্ন আর অধরা রইল না, সোনাদিয়ায় তাঁবুবাসের জন্য কক্সবাজারে থেকে খোলা ছাদের ট্রলারে রওনা হলাম দ্বীপ সোনাদিয়ার পথে।
মাথার ওপরে কড়কড়ে রোদ। ঝলমলে আলোয় জলের স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি ছাপিয়ে নৌ-পথের দু’ধারে জলে ডোবা নোনা পানি বন। ঘাট ছেড়ে যত গভীরে যাচ্ছি ক্রমশ অদৃশ্য হচ্ছে স্থলভূমি।
স্থলভাগে সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের ট্রলার জলপথ অতিক্রম করছে। সমুদ্রের নোনাজল ছুঁয়ে ঢেউ তুলে জলযান ছুটছে নীল আকাশের নিচে। জলের বুকে জেগে থাকা সারি সারি নোনাপানির বন। যেন ম্যানগ্রোভ গোত্রীয় বন, জোয়ারের পানি কমে গেলে ভেজে ওঠে পানির তলের জঙ্গল।
বিশাল জলরাশির পথ পেরিয়ে আমাদের ট্রলার চলল ছোট খালে পথ ধরে। পথের দু’ধারে কেবল সবুজ গাছের ঘন বন।
সবুজে ঘেরা খালের ধারে জেলেদের মাছ শিকার, এখানকার মুল জীবিকা।
দ্বীপের সীমানায় পা দিতে দিতে প্রায় মধ্য দুপুর। খালের পানি কমে যাওয়ায়, ট্রলার নোঙর করেছে কিছুটা কম পানির মধ্যে, পানি পেরিয়ে কাদা মাঠ। কাদা জুড়ে ছোট ছোট শামুক।
একে একে সবাই ট্রলার থেকে নেমে কাদা পেরেতো লাগল। চোরাবালির মতো কাদাতে তলিয়ে যাচ্ছে পা, এক পা দিয়ে, অন্য পা কাদা থেকে তুলতে হয়। নরম কাদায় হাঁটার অভ্যাসটা বেশিরভাগের জন্যই প্রথম।
কাদা পেরিয়ে, সোনাদিয়ার সবুজ তৃণভূমি। দূর থেকে চো্খে পড়ে ঝাউগাছের বিশাল বন। দেখে মুগ্ধ হবেন যে কোনো পথিক!
সবুজ মাঠ পেরিয়ে ঝাউবনে ডুকতেই মনে হয় এই যেন সবুজের দুয়ার। সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা এই সবুজ মায়াবী দ্বীপ রক্ষা করে যাচ্ছে ঝাউবন।
ঝাউবনের সবুজ ছায়ায় ক্যাম্পিং সবচেয়ে ভালো স্থান। ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের খুব কাছেই সৈকত, সুমদ্র থেকে ভেসে আসা গর্জন। ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশের চুলা জ্বালানো হয়েছে। এখানেই রান্নার আয়োজন।
ঝাউবন পেরিয়ে এখানে সৈকতের সীমানা। ঘন ঝাউবন পেরিয়ে বালুকাবেলার দুপাশে চোখ ধাঁধানো চিত্রপট। ঝিনুকে বাঁধানো সৈকত, যতটুকু চোখ যায় কেবল নীল জলের ধারা।
সমুদ্রের বুক থেকে টেউ এসে একের পর আছড়ে পরছে সৈকত। জনশূন্য এই সৈকত যেন একান্তই নিজস্ব। কোথাও কোনো মানুষ নেই। ঝাউবনের ঘেরা সৈকতজুড়ে ঝিনুক, নুড়ি-পাথর আর লাল-কাঁকড়া।
লাল-কাঁকড়া সোনাদিয়ায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। তবে মানুষের পায়ের শব্দ এরা অনেক দূর থেকে পায়।
সৈকতে লাল-আভার সূর্যাস্ত শেষে ক্যাম্পিং ফিরে জোছনা-বিলাস পর্ব।
ঝাউগাছের ফাঁক গলে নেমে অপরূপ জোছনার আলো। যেন চাঁদ থেকে মোমের মতো গলে নামছে আলোকচ্ছটা! যেন অন্য সোনাদিয়া। ক্যাম্প ফায়ারের আলোক-রশ্মিতে পুরো ঝাউবন, ক্যাম্পগ্রাউন্ড লালচে আলোয় ভরপুর।
কাছের সমুদ্র থেকে ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে টেউয়ের গর্জন। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে এই গর্জন যেন গ্রাস করছে পুরো দ্বীপকে।
চারপাশে ছড়ানো তাঁবুর ক্যাম্পগ্রাউন্ডে বসে মনে হচ্ছে- আক্ষরিকভাবে সোনায় মোড়ানো আমাদের সোনাদিয়া দ্বীপ।
জল-জোছনায় বিলিন হতে সোনাদিয়া বাক্যাতীত।
যেভাবে যাবেন: সোনাদিয়া যেতে আগে যেতে হবে কক্সবাজার। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে এসি/ননএসি বাসে কক্সবাজার পৌঁছে, কোনো হোটেলে অল্প সময়ে ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা করে রওনা হতে হবে।
কক্সবাজারের ৬ নম্বর ঘাট বা বিআইডব্লিউটিসি ঘাট থেকে সোনাদিয়ার ট্রলার ছাড়ে। তবে ট্রলার আগে থেকে রিজার্ভ করে নিতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টার নৌ-ভ্রমণে পৌঁছে যাবেন দ্বীপ সোনাদিয়ায়।
প্রয়োজনীয় তথ্য: সোনাদিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। স্থানীয় গাইড বা স্থানীয় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
রান্নার প্রয়োজনীয় উপাদান কক্সবাজার থেকে কিনে নিয়ে যেতে হবে। সোনাদিয়ায় রাতে থাকার জন্য কোনো হোটেল বা রিসোর্ট নেই। রাত কাটাতে হয় নিজস্ব তাঁবুতে। তাই অবশ্যই তাঁবু নিয়ে যেতে হবে।
ছবি: সামির মল্লিক
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে খান-ই-জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না।
ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদ বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।
সুলতান নসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।
বহির্ভাগ
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানোসিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নামআন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি।
পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।
অভ্যন্তরভাগ
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা।
কারও কারও মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাযের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
দিনাজপুর শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে কাহারোল থানার কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তজিউ মন্দির। অনেকের মতে কান্তনগরে স্থাপিত বলে-এর নাম কান্তজিউ মন্দির।
জনশ্রুতি আছে, শ্রী-কৃষ্ণের বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। দিনাজপুরের তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ রায় ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাটির অলঙ্করণ সমৃদ্ধ এ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে তার জীবদ্দশায় এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি।
পরে ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে তারই পালক পুত্র রাম নাথ রায় মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
স্থাপত্যিক রীতি, গঠন বিন্যাস, শিল্পচাতুর্য মন্দিরটির সামগ্রিক দৃশ্যকে এতই মাধুর্যমণ্ডিত করে তুলেছে যে এর চেয়ে সুন্দর, নয়নাভিরাম মন্দির বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই।
শৈল্পিক বিশ্লেষণে প্রায় ৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট বাহু বিশিষ্ট প্রচ্চর নির্মিত বর্গাকৃতি সমান্তরাল জায়গার উপর এই মন্দির দণ্ডায়মান। সৌধ পরিকল্পনায় মন্দিরটি তিন ধাপে নির্মিত। সামগ্রিক দৃষ্টিতে মন্দিরটি দেখতে সুবৃহৎ রথের মতো। তিনতলা বিশিষ্ট এবং বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট এবং উচ্চতা ৭০ ফুট।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় উপরের গম্বুজ ঘরের আকৃতি ধারণ করেছে। ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়ার আগে গম্বুজের উপরে ৯টি সুদৃশ্য চুড়া ছিল।
মন্দিরের বেদির নিচে এবং দেয়ালের গায়ে পোড়ামাটি খচিত প্রায় লক্ষাধিক ছবি রয়েছে। পৌরণিক চিত্র সংবলিত টেরাকোটা ছাড়াও মন্দিরের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মূর্তির টেরাকোটাও রয়েছে।
কান্তজিউ মন্দিরের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর রাস পূর্ণিমায় এখানে বসে পক্ষকালব্যাপী মেলা।
দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন থেকে পীরগঞ্জের বাসে কান্তনগর নামতে হবে। সেখানে নেমে ঢেপা নদী পার হয়ে একটু সামনেই মন্দিরটি। শীতের সময় নদী পায়ে হেঁটে পার হতে পারলেও বর্ষায় কিন্তু নৌকায় পার হতে হবে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল।
এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল, যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল-এর সঙ্গে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন।
পরে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সঙ্গে ফকির-বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান হতে বহু লোক সমাগম ঘটে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে। আয়তনে এর সঙ্গে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মায়ানমার ( তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থান) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপর দিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিমি। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২৫°০´ উত্তর থেকে ২৫°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫০´ পূর্ব থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত।
গ্রামের মধ্যে প্রায় ০.১০ বর্গ কিলোমিটার (১০ হেক্টর) অঞ্চল জুড়ে এই পুরাকীর্তিটি অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটির ভূমি পরিকল্পনা চতুর্ভূজ আকৃতির। এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত, প্লাইস্টোসীন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে।
অবশ্য বর্তমানে এ মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন একে ‘গোপাল চিতার পাহাড়’ আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর, যদিও এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।
৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে হিউয়েনৎসাং পুন্ড্রবর্ধনে আসেন ও তার বিস্তারিত বিবরণে সোমপুরের বিহার ও মন্দিরের কোন উল্লেখ নেই। গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৮১ – ৮২২ খ্রি) সিংহাসনে আরোহণ করে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন ও রাজ্যকে বাংলা বিহার ছাড়িয়ে পাকিস্তানের উত্তর – পশ্চিম সীমান্তের গান্ধার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। সম্রাট ধর্মপাল অনেক নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ছিলেন ও তিনিই বিক্রমশীলা ও সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
অন্য মতে, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ ‘পাগ সাম জোন ঝাং’য়ের লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০) কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের উল্লেখ করেছেন।
সোমপুর বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি ভারতীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অর্থ ও ধন রত্ন দান করতেন বলে বিভিন্ন লিপিতে উল্লেখ করা আছে যা ১০ – ১১শ শতাব্দীতে সমৃদ্ধশীল অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।
এছাড়া ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সোমপুর বিহার ছাড়াও অগ্রপুর (রাজশাহীর অগ্রাদিগুণ), উষ্মপুর, গোটপুর, এতপুর ও জগদ্দল (রাজশাহীর জগদল) বিহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ৯ম শতাব্দীর শেষভাগে গুর্জর রাজ প্রথম ভোজ ও মহেন্দ্র পাল, পাল সাম্রাজ্যের বিশেষ ক্ষতিসাধন করেন। পরে ১০ম শতাব্দীর শেষভাগে পাল বংশীয় রাজা মহীপাল (৯৯৫ – ১০৪৩) সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন ও সোমপুর বিহার মেরামত করেন। কিন্তু মহীপাল ও তার পুত্র নয়াপালের মৃত্যুর পর আবার পাল বংশের পতন শুরু হয়। এই সুযোগে মধ্যভারতের চেদীরাজ কর্ণ, চোলরাজ রাজেন্দ্র ও দিব্বো নামের এক দেশীয় কৈবর্ত সামন্ত নরপতি পর পর বরেন্দ্রভূমি আক্রমণ করেন।
নালন্দায় পাহাড়পুর মন্দির ও বিহার ধ্বংসের উল্লেখ সম্ভবত এ সময়ের আক্রমণের। ১১শ শতাব্দীতে পাল বংশীয় রামপাল হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। ১২শ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যের কর্ণাট থেকে আগত সেন রাজারা বাংলা দখল করেন। তাদের নিকটে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারায় সোমপুর। এ সময় শেষবারের মতো সোমপুরের পতন শুরু হয়। ১৩শ শতাব্দীর শুরুতে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ – বিন – বখতিয়ার খিলজী বাংলায় আক্রমণ করে প্রায় উত্তরবঙ্গই দখল করেন।
সম্ভবত এই মুসলমান শাসকদের মূর্তিবিরোধী মনোভাবের ফলেই বৌদ্ধদের এই বিহার ও মন্দির সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়।
বৌদ্ধ বিহারটির ভূমি-পরিকল্পনা চতুষ্কোনাকার। উত্তর ও দক্ষিণ বাহুদ্বয় প্রতিটি ২৭৩.৭ মি এবং পূর্ব ও পশ্চিম বাহুদ্বয় ২৭৪.১৫ মি। এর চারদিক চওড়া সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। সীমানা দেয়াল বরাবর অভ্যন্তর ভাগে সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ ছিল। উত্তর দিকের বাহুতে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে রয়েছে ৪৪টি করে কক্ষ। এই কক্ষগুলোর তিনটি মেঝে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিটি মেঝে বিছানো ইঁটের ওপর পুরু সুরকী দিয়ে অত্যন্ত মজবুত ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। সর্বশেষ যুগে ৯২টি কক্ষে মেঝের ওপর বিভিন্ন আকারের বেদী নির্মাণ করা হয়। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রথম যুগে সবগুলো কক্ষই ভিক্ষুদের আবাসকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীকালে কিছু কক্ষ প্রার্থনাকক্ষে রুপান্তর করা হয়েছিল।
কক্ষগুলোর প্রতিটিতে দরজা আছে। এই দরজাগুলো ভেতরের দিকে প্রশস্ত কিন্তু বাইরের দিকে সরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো কক্ষে কুলুঙ্গি পাওয়া যায়। কুলুঙ্গি সম্বলিত কক্ষগুলোর মেঝেতে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। ভেতরের দিকে কক্ষগুলোর দৈর্ঘ্য ৪.২৬ মি এবং প্রস্থ ৪.১১ মি। কক্ষের পেছনের দিকের দেয়াল অর্থাৎ সীমানা দেয়াল ৪.৮৭মি এবং সামনের দেয়াল ২.৪৪মি চওড়া। কক্ষগুলোর সামনে ২.৫মি প্রশস্ত টানা বারান্দা আছে। ভেতরের দিকের উন্মুক্ত চত্বরের সঙ্গে প্রতিটি বাহু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত।
বিহারের উত্তর বাহুর মাঝ বরাবর রয়েছে প্রধান ফটক। এর বাইরের ও ভেতরের দিকে একটি করে স্তম্ভ সম্বলিত হলঘর এবং পাশে ছোট ছোট কুঠুরি আছে। এই কুঠুরিগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত। প্রধান ফটক এবং বিহারের উত্তর-পূর্ব কোনের মাঝামাঝি অবস্থানে আরও একটি ছোট প্রবেশ পথ ছিল। এখান থেকে ভেতরের উন্মুক্ত চত্বরে প্রবেশের জন্য যে সিঁড়ি ব্যবহৃত হত তা আজও বিদ্যমান।
উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম বাহুতেও অনুরূপ সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। এদের মাঝে কেবল পশ্চিম বাহুর সিঁড়ির চিহ্ন আছে। উত্তর বাহুর প্রবেশ পথের সামনে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত একটি পুকুর ছিল। ১৯৮৪-৮৫ সালের খননে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রথম নির্মাণ যুগের পরবর্তী আমলে এ পুকুর খনন করা হয় এবং এসময় এ অংশের সিঁড়িটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে পুকুরটি ভরাট করে দেওয়া হয়।
পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য মূর্তি
বেলে পাথরের চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ, কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবলহাটির মহারাণীর তৈলচিত্র, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্ণী নারায়নের ভগ্ন মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, নন্দী মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এপর্যন্ত আবিষ্কৃত লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হল ময়নামতি প্রত্নস্থল। বর্তমানে ময়নামতি অঞ্চলে যে ধ্বংশস্তুপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ইহা জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ।
কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান।
কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল–গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনও ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।
ধারণা করা হয় যে খৃষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়।
খৃষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম–দশম শতাব্দীতে।
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্খানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।
বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ–পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
এ স্থানটি দর্শনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঢাকা থেকে ১১৪ কি.মি. দূরে ময়নামতির অবস্থান এবং চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় ময়নামতি পৌঁছানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রাম দুটি ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার প্রাপ্তিস্থান হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত। গ্লাইসটোসিন যুগে গঠিত মধুপুর গড়ের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এ গ্রাম দুটিতেই নিবিড় অনুসন্ধান ও সীমিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারী প্রত্নস্থলে আবিষ্কৃত হয়েছে ৬০০ মি. x ৬০০ মি. আয়তনের চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের ৫-৭ ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনও টিকে আছে। এছাড়াও দুর্গের চারিদিকে রয়েছে পরিখা (যদিও কালের ব্যবধানে তাতে মাটি ভরাট হয়েছে)।
ভরাট হলেও পূর্ব প্রান্তের পরিখার চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। দুর্গের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৫.৮ কি.মি. দীর্ঘ, ২০মি. প্রশস্ত ও ১০ মি. উঁচু অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। সম্ভবত এটি দ্বিতীয় দুর্গ প্রাচীর হিসেবে উয়ারী দুর্গনগরের প্রতিরক্ষার কাজ করত। ভারতের নাগার্জুনকুন্ড হল এরকম দ্বিস্তর বিশিষ্ট দুর্গ প্রাচীরের আরেকটি উদাহরণ।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত উয়ারী নগরের বাইরে আরো ৫০টি প্রত্নস্থান এ যাবত আবিষ্কৃত হয়েছে।
বন্যামুক্ত উঁচু স্থানে বসতি স্থাপনকারী মানুষের মতো উন্নত পরিকল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় মহাস্থান ও উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ অঞ্চলের বসতিবিন্যাসেও দেখা যায়।
উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি দুর্গনগর, নগর বা একটি নগর কেন্দ্র। আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় যে, উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একাধারে একটি নগর ও সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র। বহু প্রত্নতত্ত্বপ্রেমী পর্যটক উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে বেড়ান।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েব সাইট।
ফারুখ আহমেদ:
প্রবল বাতাসে সমুদ্র উর্মিমালার ফেনা তোলা মাতামাতি। নির্জনতায় বিশুদ্ধভাবে প্রকৃতির গান শোনা আর শেষ বিকেলের সোনারোদের আলোর রংয়ে আঁকা জলছবি দেখা- এর সব কিছু মিলবে শামলাপুর সমুদ্র সৈকতে।
মাছধরার নৌকা আর জেলেরা ছাড়া সেভাবে কোনো মানুষজন চোখে পড়বে না। ঝাউবনে পাওয়া যাবে সবুজ ছোঁয়া। এসব দেখতে চলুন ঘুরে আসি টেকনাফের কাছে বাহারছড়া ইউনিয়নের পাশের শামলাপুর সমুদ্র সৈকত থেকে।
কেউ কেউ তাকে বাহার ছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও ডেকে থাকে। এখানকার দৃষ্টি নন্দন ঝাউবনে ঘেরা অপরূপে শোভিত নির্জন সৈকতে এসে ভালোলাগার ষোলআনাই পাবেন!
যাত্রা শুরু হল হোয়াইক্যং রোড থেকে। গন্তব্য শামলাপুর। হোয়াইক্যং রোড বা শামলাপুর নাম হয়ত অনেকেই শুনে থাকবেন। আবার কারও কারও মনে হবে জীবনে প্রথম শুনলাম এই নামগুলো।
সে যাই হোক, টেকনাফ থেকে হোয়াইক্যং রোড ধরে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের শামলাপুর গেলে যে সৌন্দর্য উন্মোচিত হবে তা সারা জীবন মনে থাকবে।
টেকনাফ বহুবার গেছি। তবে টেকনাফ উদ্দেশ্য করে গেছি খুব কম সময়। এবারের ঘোরাফেরার মূল উদ্দেশ্যই ছিল টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপ ও নাফ নদীর উপর ডকুমেন্টারি করা।
খুব ভোরে বাস থেকে সাংবাদিক বোরহানুল হক সম্রাটসহ আমরা টেকনাফ লিঙ্ক রোডে নেমে সোজা চলে আসি জালিয়ার দ্বীপ। নাফনদীর তীরের ছোট্ট দ্বীপ জালিয়া অসাধারণ। আমরা জালিয়ার দ্বীপ ভ্রমণ বা এখানে আমাদের ডকুমেন্টারির কাজ শেষ করে দুপুরে চলে আসি হোয়াইক্যং রোডে স্থানীয় সাংবাদিক আবসার কবির আকাশের বাড়ি। রাস্তার ঠিক পাশে আবসার কবিরের সে বাড়ি থেকে নাফ নদী ও পাহাড় দর্শন আর তা আপ্যায়ন অনেকদিন মনে থাকবে।
আপ্যায়ন পর্ব শেষে দুপুরের ভাত ঘুমের সময়টা আমরা আকাশের বাড়িতে কাটিয়ে ঠিক সাড়ে তিনটার সময় শামলাপুরের উদ্দেশ্যে ব্যাটারি-চালিত অটো-রিকসায় চেপে বসি।
আগেই বলেছি শামলাপুর থেকে সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। আজ আমরা সমুদ্রের উর্মিমালায় মন হারাবো।
হোয়াইক্যং রোড ধরে কিছুটা পথ এগিয়ে ধমধমিয়ার পথে চলা শুরু করি। পাহাড়ি পথ। দুপাশের পুরোটাই ঘনজঙ্গল। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। পথ চলতে চলতে চোখে পড়ে রাস্তা জুড়ে শিশুদের খেলাধুলা আর কাঠ কুড়ানোর দৃশ্য।
জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা কিছু ট্রেকারদেরও দেখা পেয়ে যাই।
পুরো পথটাই যেন সবুজে মোড়া। অনেক নাম না জানা ফুলের সঙ্গে নীল বনলতা চোখে পড়ে। এভাবেই জাদিমুরা, লেদা, মুচনি, রঙ্গীখালি ও মৌলবী পাড়া পেছনে ফেলে লাতুরিখোলায় এসে যাত্রা বিরতি নেই।
লাতুরিখোলার আশপাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। এখানে জীবন অনেক ধীরস্থির। কোনো ব্যস্ততা নেই এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায়।
বেশিরভাগই চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। গ্রামবাসিদের উপার্জন কি জানা যায়নি বা জানতে চাইনি।
যেহেতু এখানকার প্রকৃতি অসাধারণ সেহেতু ট্রেকারদের জন্য এমন প্রকৃতিতে চলাচল দারুণ বলা চলে। ভাবতে গিয়ে মনে হয় যদি স্থানীয়রা এখানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো হোমস্টের ব্যবস্থা করত তাহলে বিষয়টা হত সোনায় সোহাগা।
এরইমধ্যে আমাদের সঙ্গী শিক্ষ জুলকারনাইনের ছাত্রদের আপ্যায়ন হিসেবে ডাব চলে এসেছে। আমরা ডাবের পানি পান করে দ্রুত সামনে যাই আর ভাবি প্রকৃতির মতোই সুন্দর আর ছবির মতো এখানকার মানুষগুলো।
এভাবে কতক্ষণ চলেছি মনে নেই, দুর থেকে ঝাউগাছের সারি দেখে বুঝতে পারি সমুদ্র খুব কাছাকাছি। এরপরের সময়টুকু মেরিন ড্রাইভ রোডের। তারপরই পা রাখি শামলাপুর সমুদ্র সৈকতে।
মনে পড়ে গেল গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শামলাপুর সৈকতে মাসব্যাপি ঝাউবন কাটার খবর দেশের সবকটা জাতীয় দৈনিকের হেড লাইন হয়েছিল!
ঝাউগাছের সারি, বালুর নরম বিছানা, তার সামনে বিশ্রামরত মাছ ধরার ট্রলার। আরও সামনে অপরূপ বঙ্গপোসাগর। এখানে নির্জনতাও একটা বড় ব্যাপার।
কক্সবাজার হিমছড়ি বা ইনানীতে কত মানুষের ভিড় আর হৈহুল্লোর। এখানে তার কিছুই নেই। বেলা পড়ে আসায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো টেনে তীরে তোলা হচ্ছে।
অনেকেই জাল দিয়ে মাছ ধরছে। একঝাঁক স্থানীয় শিশুর চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চোখে পড়ল শুধুই সমুদ্র আর তার নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জন।
আবেগ কোত্থেকে উথলে উঠল বলতে পারবো না। সারা শরীরে কারেন্টের মতো শিহরণ বয়ে গেলো।
পানি আমার খুব পছন্দ, তাই তো বারবার নদীর কাছে ছুটে যাই, ছুটে আসি সমুদ্রের কাছে। সমুদ্র বা নদী কেউ আমাকে নিরাশ করে না বা করেনি। তাইতো আজ এখানে বা সমুদ্র সৈকতে পা দিয়েই দারুণ রোমান্স অনুভব করি।
এরমধ্যে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক খোকন স্যার আমাকে নিয়ে চললেন লালকাঁকড়া দেখাতে। সঙ্গে রয়েছেন জুলকারনাইন। অন্যদিকে বোরহানুল হক সম্রাট দলবল নিয়ে সমুদ্র জলে অবগাহনে মেতেছেন।
সবমিলে শামলাপুর এসে সমুদ্র সৈকতের রোমান্সের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে চমৎকার মিশেল পাওয়া গেল তা এক কথায় অসাধারণ। এমন অসাধারণে বারবার আমি ডুবতে চাই, কারণ আমার কাছে মনে হয় সৈকত শুধুই জীবনের উৎসব।
দরকারি তথ্য: কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে সোজা ঘণ্টা দুয়েক গেলেই শামলাপুর বা বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতের দেখা মিলবে। আমরা গিয়েছিলাম টেকনাফ থেকে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য আমাদের পথে যাওয়া অর্থ্যাৎ হোয়াইক্যং রোড ধরে শামলাপুর পর্যন্ত পথটুকু দারুণ উপভোগ্য হবে নিঃসন্দেহে। সে জন্য আপনাদের টেকনাফের বাসে চড়ে টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যং রোড নামতে হবে।
তারপর ধমধমিয়া হয়ে চলে আসুন শামলাপুর সমুদ্র সৈকতে।
সিএনজি চালিত অটো রিক্সা বা ব্যাটারি চালিত অটো বাহনই হোয়াইক্যং রোড থেকে শামলাপুর পর্যন্ত একমাত্র ভরসা।
শামলাপুর থাকা খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কক্সবাজার বা ইনানীই একমাত্র উপায়। তবে চলতি পথে ছোটখাটো কিছু বাজার ও দোকানের দেখা পাবেন। সেখানেই সারতে পারবেন প্রযোজনীয় কাজ।
একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার বা আপনার ভ্রমণ সঙ্গীদের দিয়ে পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কোনো কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু ফেলে আসবেন না সমুদ্র সৈকতে!
নরসিংদী ৯৪৬২২২২, ০১৭৩০-০০২১৫৬
মনোহরদী ৯৪৪৫২২২, ০১৭৩০-০০২১৬৫
ঈলাশ ৯৪৬৬৩৭৭, ০১৭৩০-০০২১৬৭
মাধবদী ৯৪৪৬১১১, ০১৭৩০-০০২১৭৪, ০১৭২৬-৬৮৮৮৬৮
রায়পুরা ৯৪৪৮২২২, ০১৭৬৭-৭২৭৭৯৯
শিবপুর ০১৭৭৯-৩০৩৭০৭, ৬২৫৬৭৬০০০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
টঙ্গী ৯৮০১০৭০, ০১৭৩০-০০২১৩০
শ্রীপুর ০১৭৭০-৬০৩৮০৮
কালিয়াকৈর ০৬৮২২-৫১৩৩৩, ০১৭৪৪-২৪২২৪৮
জয়দেবপুর ৯২৫২৬২৮, ০১৭৩০-০০২১২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
সিদ্দিক বাজার ৯৫৫৫৫৫৫
সদরঘাট ৯৫৩৪৪৩৩
সদরঘাট নদী ৭৪৫৪০৫৫
পোস্তগোলা ৭৪৪০৭৭১, ০১৭৩০-০০২২১৬,
লালবাগ ৫৮৬১৭১৭১, ০১৭৩০-০০২২১৮
পলাশী ব্যারাক ৫৮৬১৫৫৫৫, ০১৭৩০-০০২২১৯
খিলগাঁও ৫৫১২০৩২৯, ০১৭৩০-০০২২২৫
তেজগাঁও ৮৮৭০৩১৪, ০১৭৩০-০০২২২৬
মোহাম্মদপুর ৯১১২০৭৮, ০১৭৩০-০০২২২৭
মিরপুর ৯০০১০৫৫, ০১৭৩০-০০২২২৯
কুর্মিটোলা ৮৭১৩৩৯৯, ০১৭৩০-০০২২৩২
ডিইপিজেড ৭৭৮৮৪৪৪, ০১৭৩০-০০২২৩১,
বারিধারা ৯৮৪৭৩৯৭, ০১৭৩০-০০২২৪৫,
ডেমরা ৭৫০০১১১, ০১৭৩০-০০২৩০২
সাভার ৭৭৪৮৩৩৩, ০১৭৩০-০০২২৫০
ধামরাই ০১৭৪২-৩০২৮৫০
কেরানীগঞ্জ ৭৭৬৬৬৬৬, ০১৭৩০-০০২২৪৭
দোহার ০১৭২৬-৮৪৫৯৪৯
হাজারীবাগ ৫৮৬১৬২২২
সুত্রাপুর ০১৭৯৪-১১৭০৩৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মুন্সিগঞ্জ ৭৬১১১২১, ০১৭৩০-০০২১৪২
কমলাঘাট ৭৬১১২২২, ০১৭৩০-০০২১৫২
শ্রীনগর ৭৬২৭৩৩৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নারায়নগঞ্জ ৭৬৪৮৭৪৮, ০১৭৩০-০০২৩১০
হাজীগঞ্জ ৭৬৪৮৭৯৮, ০১৭৩০-০০২৩১১
নারায়নগঞ্জ নদী ৭৬৬১৮৮৮, ০১৭৩০-০০২৩১৩
বন্দর ৭৬৪৮৯১৮, ০১৭৩০-০০২৩১২
কাঞ্চন ৯৩৪৫৮০০, ০১৭৩০-০০২৩১৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মানিক গঞ্জ ৭৭১০২২২, ০১৭৩০-০০২৩৮৫
ঘিওর ৭৭২৭০৯৯, ০১৭৩০-০০২৩৮৬
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
জামালপুর ০৯৮১-৬৩৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৩৯৯
সরিষাবাড়ী ০৯৮২৭-৫৬০০৭, ০১৭৩০-০০২৪০১
ইসলামপুর ০৯৮২৪-৭৪০২২, ০১৭৪৯-৮০৯৯২৬
মেলান্দহ ০৯৮২৬-৫৬৩৫৫
দেওয়ানগঞ্জ ০৯৮২৩/৭৫২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
টাংঙ্গাইল ০৯২১-৬৩৭৭৭, ০১৭৩০-০০২৩৮৮
মধুপুর ০৯২২৮-৫৬১২৬
মির্জাপুর ০১৭৭২-১৬৯৮৭০
বাসাইল ০১৭৬৮-০৭০০৭৯
সখিপুর
ভূয়াপুর ০১৭৩১-৩৬৩০০০
নাগরপুর
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
রাজবাড়ী ০৬৪১-৬৫৫৩৮, ০১৭২৬-৫৯৫১৫১
ঈাংশা ০১৭১৭-৬০৭১৩২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
শেরপুর ০৯৩১-৬১২২২, ০১৭৩০-০০২১৮৭
নলিতাবাড়ী
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ময়মনসিংহ ০৯১-৬৭৪৪৪, ০১৭৩০-০০২৩৫৩
মুক্তাগাছা ০৯০২৮-৭৫২২২, ০১৭৩০-০০২৩৫৬
ঈশ্বরগঞ্জ ০৯০২৭-৫৬৩৩৩, ০১৭২০-২০০৪১
ভালুকা ০৯০২২-৫৬২৭৭, ০১৭৩০-০০২৩৬৮
গফরগাও ৯০২৫৫৬৪০
হালুয়াঘাট ৯০২৬৫৬৩৩৩
ফুলপুর ৯০৩৩৫৬৩৩৩
ফুলবাড়ীয়া ০১৭৩০-০০২৩৬৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নেত্রকোনা ০৯৫১-৬১৪৪৪
কেন্দুয়া ০১৭৭৯-২২৫৭৭৭
মোহনগঞ্জ ০৯৫২৪-৫৬১৪৯
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
কিশোরগঞ্জ ০৯৪১-৬১৯৬৬, ০১৭৩০-০০২৩৭২
বাজিতপুর ০৯৪২-৩৬৪৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৩৭৪
ভৈরব বাজার ৯৪৭০৪২২, ০১৭৩০-০০২৩৭৬
ভরব বাজার নদী ৯৪৭০২২২, ০১৭৪৬-৬৩১৭২১
কুলিয়ারচর ০৯৪২৯-৫৬২২২, ০১৭৩০-০৮২২১৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ফরিদপুর ০৬৩১-৬৩৪৩৩, ০১৫৫৮-৫৪৪৩০০
ভাংগা ০১৭৬৭-৯২৩৪৭০
বোয়ালমারী ০৬৩২৪-৫৬৪৪৯, ০১৭৩৩-৫২৭৯০৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
শরীয়তপুর ০৬০১-৬১৫১৩, ০১৭২৬-৮৭৭২৭০
গোসাইর হাট ০১৭৪৪-৪৩৬৯৯৯
ডামুড্যা ০১৯২৭-৫০২৫৯২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মাদারীপুর ০৬৬১-৬১২৩৫
রাজৈর ০১৭৫১-০৫৪০৪০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
আগ্রাবাদ ০১৭৩০-০০২৪০৮, ৭১৬৩২৬
বন্দও ০৩১-২৫২০৩৩৯, ০১৭৩০-০০২৪২০
ইপিজেড ০৩১-৮০০৪১৯, ০১৭৩০-০০২-৪২৫
নন্দনকানন ০৩১-৬৩০৩৩৪
কালুরঘাট ০৩১-৬৭০০৬৬
বায়েজীদ ০৩১-৬৮৩০৮০, ০১৭১৩-০০২৯১৭
কুমিরা ০৩১-২৫১৭৬৯৯, ০১৫৫৮-৪৫৬২০০
সীতাকুন্ড ০৩০২৮-৫৬০২২, ০১৭৩০-০০২৪২৮
মিরেরসরাই ০১৮৭৫-৯৭৭৯৯৪
ফটিকছড়ি ০১৭৭২-২৪১৫১০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
গোপালগঞ্জ ৬৬৮৫২২২, ১৭১৩১৪৫০৮৪
টুঙ্গীপাড়া ৬৬৫৬৩৪৫, ০১৭৫৪-৬০৭১৭২
মুকছুদপুর ৬৬৫৪৫৬৩০০, ০১৭৭৯-৪৪২১৫৫
কোটালীপাড়া
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
কক্সবাজার ৩৪১৬৪২৪২, ০১৭৩০-০০২৪৩৪
চকরিয়া ০৩৪২২-৫৬০৫১, ০১৭৩০-০০২৪৪১
পেকুয়া ৩৪২৮৫৬১১১, ০১৭৩০-০০২৪৪২
মহেশখালী০৩৪২৪-৭৪৩৩৩
টেকনাফ ০১৭৮২-৭৮৭৮৯১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
রাঙ্গামাটি ৩৫১৬২২২০, ০১৭৩০-০০২৪৬২
কাপ্তাই ৩৫২৯৫৬৩৯৫, ০১৭৩০-০০২৪৬৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
খাগড়াছড়ি ৩৭১৬১৯৬৬, ০১৭৩০-০০২৪৫৪
রামগড় ০১৮২০-৭০৫১৭৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বান্দারবান ৩৬১৬২২২২, ০১৭৩০-০০২৪৬০
লামা ০১৭৯৩-১৮৩৪৬৮
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মাইজদী ৩২১৬২০১১, ০১৭৩০-০০২৪৮৯
চৌমুহনী ০৩২১-৫১৫৪৪
কোম্পানীগঞ্জ ০১৮১৫-১৮২১০৪
সোনাইমুড়ী ০৩২২-৭৫১১১১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ফেনী ০৩৩১-৭৪৭৪৪, ০১৭৩০-০০২৪৯২
ছাগলনাইয়া ৩৩২২৭৮৩৭৫
সোনাগাজী ৩৩২৫৭৬০৪৪
পরশুরাম ০১৮৫৪-৪২২৪৭৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
লক্ষ্মীপুর ০১৭৩০-০০২৪৯৩, ০৩৮১-৫৫২২২
রামগঞ্জ ০৩৮২৪-৭৫৩৩৩, ০১৭৫১-৫১৭৭১৯
রামগতি ৩৮২৩৫৬২৭৭, ০১৭৪৯-৪৫২২৪৫
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
কুমিল্লা ০৮১-৬৫০৯০
দৌলতগঞ্জ ০৮০৩২-৫১২২২
ইপিজেড ০৮১-৭১০১০, ০১৭৩০-০০২৪৭০
চৌদ্দগ্রাম ০৮০২০-৫৬৩৩৩, ০১১৯৭-০৬১২১২
দাউদকান্দি ০১৫৫৭-৭৮১৬৮৬
মুরাদনগর ০১৭১৫-৭৩৬৭৮৮
চৌয়ারা বাজার ০৮০৪-২৫৭১৩৩৩
চান্দিনা ০১৭৬৩-৯৪৫৩৩১
হোমনা ০১৭৬৬-৩০৬৮৬৮
বরুড়া ০৮০২৭-৫২২২২, ০১৭৩০-০০০০৬৬
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
চাঁদপুর উত্তর ০৮৪১-৬৩০০৩
চাঁদপুর দক্ষিণ ০৮৪১-৬৩০১১
চাঁদপুর নদী ৮৪১৬৩০৩৫, ০১৭৩০-০০২৪৮৭
হাজীগঞ্জ ০৮৪২-৪৭৫৩৩৩
কচুয়া ৮০২৫৫৬২০২, ০১৭২৮-৫৪৬১১০
শাহরাস্তি ৮৪২৭৫৬২২২, ০১৭৩৯-৪৬৫১২৬
হাইমচর ০৮৪২৩-৫২১১১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বি-বাড়ীয়া ০৮৫১-৬১১১১, ০১৭৩০-০০২৪৭৯
আশুগঞ্জ ০৮৫২-৮৭৪২২০উ
আখাউড়া ০৮৫২-২৫৬০১৬, ০১৭৩০-০০২৪৮৩
কসবা ০১৭৪৫-৪৮১২৪৪
বাঞ্ছারামপুর ০১৭৮৬-৩৫০০৮৫
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বাগেরহাট ০৪৬৮-৬৩৬৬৬
মংলা ০৪৬৫৮-৭৩৩২০
মোড়েলগঞ্জ ০৪৬৫৬-৫৬৩৩৩
শরণখোলা ০৪৬৫৯-৫৬২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
খুলনা সদর ০৪১-৭৬০৩৩৩
খলিশপুর ০৪১-৭৬১০০৫
টুটপাড়া ০৪১-৭২৩০১১
দৌলতপুর ০৪১-৭৬২০৫২
খুলনা নদী ০৪১-৮৯০০৪৮
খানজাহান আলী ০১৭৬৭-৮৯৭০১৩
ডুমুরিয়া ০৪০২৫-৫৬১৪৪
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
সাতক্ষীরা০ ৪৭১-৬২৩৫৭
কালীগঞ্জ ০৪৭২৫-৫৬১০৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
যশোর ০৪২১-৬৫১১৪
নওয়াপাড়া ০৪২২২-৭১২৪৫
ঝিকরগাছা ০৪২২৫-৭১২২২
বেনাপোল ০৪২২৮-৭৫২২৪
মনিরামপুর ০৪২২৭-৭৮৩৩৩
বাগারপাড়া ০৪২২৩-৫৬০৯০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নড়াইল ০৪৮১-৬২২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ঝিনাইদহ ০৪৫১-৬২৩৩৩
শৈলকুপা ০৪৫২৬-৫৬২২২
কোটচাঁদপুর ০৪৫২৪-৬৫০৭৭
হরিণাকুন্ড ০৪৫২২-৭৪০৭৭
কলীগঞ্জ ০৪৫২৩-৫৬৬৪৪
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মাগুরা ০৪৮৮-৬২২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
কুষ্টিয়া ০৭১-৬১৯২২
খোকসা০৭০২৪-৫৬২০০
ভেড়ামারা০৭০২২-৭১০৯৯
কুমারখালী০৭০২৫-৭৬৩৬৫
মিরপুর ০৭০২৬-৫৬৪৪৪
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
চুয়াডাঙ্গা ০৭৬১-৬৩১২২
আলমডাঙ্গা০৭৬২২-৫৬৪৪৪
জীবন নগর০৭৬২৪-৭৫২০০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
মেহেরপুর ০৭৯১-৬২২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ০৭২১-৭৫০২৭০ ০১৭৩০-০০২৫০৮
চারঘাট০১৭৩৩-২০১৮৮১
গোদাগাড়ী০৭২২৫-৫৬০৩৩, ০১৭৩০-০০২৫১০
তানোর০৭২২৯-৫৬০৪৫, ০১৭৩০-০০২৫১১
পুটিয়া০৭২২৮-৫৬৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৫১২
বাগমারা০১৭৫৫-৩৭০৫৭০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নাটোর০৭৭১-৬৬৯১১, ০১৭৩০-০০২৫১৮
লালপুর০৭৭২৫-৭৫১৭৫, ০১৭৩১-৫২৩২২৫
দয়ারামপুর০১৭৩০-০০২৫১৭
গুরুদাসপুর০৭৭২৪-৭৪৩৩৩, ০১৭৬৭-১৫৯৯৯৯
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
চাপাইনবাবগঞ্জ০৭৮১-৫২২১২, ০১৭৩০-০০২৫১৫
শিবগঞ্জ০৭৮২৫-৭৫৩১৩, ০১৭৩৫-৫৫৯২৪১
গোমস্তাপুর০১৭৫৩-৩৮৭৯৫০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নওগাঁ ০৭৪১-৬২০০০, ০১৭৩০-০০২৫২৭
পত্নীতলা ০৭৪২৮-৬৩০৭০, ০১৭১৮-৩২৯৩৩৭
আত্রাই ০৭৪২২-৭১১১১, ০১৭১৯-৭৩৫৩৯৯
নেয়ামতপুর ০৭৪২৭-৫৬২৫৫, ০১৭৭৩-৩৬৮২৪০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বগুড়া ০৫১-৬৩৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৪৯৭
শেরপুর ০৫০২৯-৭৭৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৩৩২
সোনাতলা০৫০৩২-৭৯০০৯, ০১৭৩০-০০২৪৯৮
সারিয়াকান্দি ০১৭৩২-৫৩৫৫১১,
ধুনট ০১৭৫৮-৮০৭৮১৭
গাবতলী ০১৭৩০-০৮২২২৪
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
জয়পুরহাট ০৫৭১-৬২৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৫৩৯
পাঁচবিবি ০৫৭২৪-৭৫৪৩৩, ০১৭৩০-০০২৫৪৩, ০১৭২৬-৬৬২১২৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
পাবনা ০৭৩১-৬২২২২
ঈশ্বরদী ০৭৩২৬-৬৩৩৩৩, ০১৯১৬-৯৯৯৭৩৫
বেড়া ০৭৩২৩-৭৫২২২, ০১৭৩০-০০২৫৪৬
সুজানগর ০৭৩২৯-৫৬৩৩৮, ০১৭৫৮-৭৮০৯৭০
চাটমোহর ০৭৩২৪-৫৬১৫৫, ০১৭৭৩-৭৭০৭৭৭২
ঈশ্বরদীইপিজেড ০৭৩১-৫৯৪৪৪, ০১৭২৯-৩৩৫৫১২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
সিরাজগঞ্জ০৭৫১-৬২৬২২, ০১৭৩০-০০২৫৪৯
উল্লাপাড়া০৭৫২৯-৫৬৩৩৩, ০১৭৩০-০০২৫৫৬
শাহজাদপুর০৭৫২৭-৬৪৭৭৭, ০১৭৩০-০০২৫৫৯
কাজিপুর ০৭৫২৫-৫৬২৯৯, ০১৭৩০-০০২৫৬০
রায়গঞ্জ০১৭৩৭-০৭৩৩৩৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বেনাপোল ০৪২২৮-৭৫২২৪
মনিরামপুর ০৪২২৭-৭৮৩৩৩
বাগারপাড়া ০৪২২৩-৫৬০৯০
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বরিশাল ০৪৩১-৬৫২২২
বরিশাল নদী০৪৩১-৬৪০০০
গৌরনদী০৪৩২২-৫৬৩৩৩, ০১৭৫৭-৫৩৬০৬৫
বানারিপাড়া০৪৩৩২-৫৬২২২, ০১৯২৭-৮৫৯৯৩৬
উজিরপুর০৪৩২৯-৫৬২২২
মেহেন্দীগঞ্জ০৪৩২৫-৫৬৩৩৩, ০১৭৭৮-৭৮৩৯৩৯
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ঝালকাঠী০৪৯৮-৬২২২২
নলসিটি ০৪৯৫৩-৭৪১১১, ০১৭৪৮-৩৪৮৮১১
কাঠালিয়া০৪৯৫২-৫৬১১১, ১৭৩০০০৯০৬১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ভোলা ০৪৯১-৬২২২২
বোরহান উদ্দিন ০৪৯২২-৫৬২২২, ০১৭০৯-০৭৯৫৯৫
চরফ্যাশন০৪৯২৩-৭৪২২২, ০১৭১৫-৯১৭১১৭
লালমোহন০৪৯২৫-৭৫৫৫৫
দৌলতখান০১৭৯৭-০০৫৪৮০
তজুমুদ্দিন০১৭২০-২১৩২৩৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
পটুয়াখালী০৪৪১-৬২২২২, ০১৭৭৭-৯৯৮৩৩৩
বাউফল ০৪৪২২-৫৬২২০, ০১৭২৬-১২১৩৬৬
খেপুপাড়া০৪৪২৫-৫৬১১১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
বরগুনা ০৪৪৮-৬২২২২, ০১৭২৮-৬০৪৮৬০
আমতলী ০৪৪৫২-৫৬০৩৩, ০১৭৯৪-৫৯৯০৪৯
পাথরঘাটা০৪৪৫৫-৭৫৪৪৪
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
নীলফামারী ০৫৫১-৬১৩৩৩, ০১৭৩০-০০৯১০৫
উত্তরা ইপিজেড ০৫৫১-৬৫০০৯, ০১৭৪৪-৫৮৫৫৭৭
ডোমার ০৫৫২৩-৭৫২২২, ০১৭৩০-০০৯১০৬
ডিমলা ০৫৫২২-৫৬৩৩৩, ০১৭৮৯-৮৮৬০৩০
জলঢাকা ০৫৫২৪-৬৪৩৩৩, ০১৭১৯-৭০৬০২২
সৈয়দপুর ০৫৫২৬-৭২২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
রংপুর ০৫২১-৬৫২২৪
হারাগাছ ০১৭৩০-০০২৫৬৪
বদরগঞ্জ ০৫২২২-৫৬২২২, ০১৭৯২-৮১৭০৪৪
কাউনিয়া ০৫২২৪-৫৬৪৪৪, ০১৭৭৭-৪৯৬৫৫৫
পীরগাছা ০৫২২৬-৫৬৫৫৫, ০১৭৩০-০০২৫৬৩
মিঠাপুকুর ০৫২২৫-৫৬২২২, ০১৭৬৮-৮৪৭৯৯৯
পীরগঞ্জ ০১৭৫৫-৫০২০১৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
লালমনির হাট ০৫৯১-৬১২২২, ০১৭৩০-০০৯১০৫
পাটগ্রাম ০৫৯২৫-৫৬৩৪৪, ০১৭২০-৮৪৭৬৮৯
কালীগঞ্জ ০৫৯২৪-৫৬০৯৯, ০১৭৪১-০৬০৭৩৩
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
কুড়িগ্রাম ০৫৮১-৬১৩৩৩, ০১৭৩০-০০৯১০১
উলিপুর ০৫৮২৯-৫৬০৩৩, ০১৭৩০-০৮২২১৪
নাগেশ্বরী ০১৭৪৬-০৯৩৬৬৯
চিলমারী ০১৭৪০-০৪৭৭৪১
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর তৃতীয় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মাত্র এক বছর পরেই দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই পরী বিবির সঙ্গে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাওয়ার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩শ’ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
এখানকার স্থাপনার অন্তর্গত: পরীবিবির সমাধি বেশ উল্লেখযোগ্য। এটি মোগল আমলের একটি চমৎকার নিদর্শন। প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-
কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
পরীবিবির সমাধি
উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ
এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক, এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে। বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারটুলি এলাকায় ঢাকার নওয়াবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে জাদুঘর। কথিত আছে, মুঘল আমলে এখানে জামালপুর পরগণার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ্’র রংমহল ছিল এ স্থানটি। পরে তাঁর পুত্র মতিউল্লাহ্’র নিকট থেকে রংমহলটি ফরাসিরা ক্রয় করে এখানে একটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ্ ফরাসিদের নিকট থেকে কুঠিবাড়িটি কিনে নেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে এটি নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। এ বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গণি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করান যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। আব্দুল গণি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহ’র নামানুসারে ভবনের নামকরণ করেন আহ্সান মঞ্জিল। সেই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল এবং পূর্বেকার ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল। আহসান মঞ্জিল দেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন। এক মিটার উঁচু বেদির উপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদ ভবনটির আয়তন দৈর্ঘে ১২৫.৪ বর্গমিটার ও প্রস্থে ২৮.৫ বর্গমিটার। নিচতলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার ও দোতলায় ৫.৮ মিটার। প্রাসাদটির উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দার উপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সন্মুখস্থ বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। সিঁড়ির সামনে বাগানে একটি ফোয়ারা ছিল যা বর্তমানে নেই। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলান সহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলির মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত। আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার ভবনটিকে সংস্কার করে জাদুঘরে পরিণত করেছে। গণপুর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের দায়িত্বে এর সংস্কার কাজ ১৯৯২ সালে সম্পন্ন করে ওই বছরেই ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাসাদটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর-এর নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং এখানে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়।
তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগড়াপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁও অবস্থিত। সবুজ বন-বনানী আর অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দু আমলের রাজধানী এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকদের পুর্ববঙ্গের প্রাদেশিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামের উদ্ভব বলে কারও কারও ধারণা রয়েছে। অন্য ধারণামতে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ’র স্ত্রী সোনাবিবি’র নামানুসারে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের মধ্যে শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সোনারগাঁও একটি গৌরবময় জনপদ। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। ঈশা খাঁ ও তাঁর বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম। পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট লাল ইট দিয়ে তৈরি। ইমারতগুলো কোথাও একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও মিশে আছে। অধিকাংশ ভবনই আয়তাকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত। দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। দুই পাশে মোট ৫২টি পুরানো বাড়ি এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ। পানাম শহরের ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁ’র তোরণকে একত্রে নিয়ে মোট প্রায় ষোল হেক্টর স্থান জুড়ে লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। এখানে ১টি জাদুঘর, ১টি লোকজ মঞ্চ, সেমিনার কক্ষ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। এখানকার জাদুঘরে প্রায় সাড়ে চার হাজার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জুমার নামাজের জন্য জাদুঘর বন্ধ থাকে।
তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
দিনাজপুর ০৫৩১-৬৪২৭৭, ০১৭৩০-০০৯১২০
পার্বতীপুর ০৫৩৩৪-৭৪২২২, ০১৭৪৯-৪৮৮৪৮৮
ফুলবাড়ী ০৫৩২৭-৫৬২২২, ০১৭৩০-০০৯১২২
সেতাবগঞ্জ ০৫৩২৫-৭৩৩৪৪, ০১৭৩০-০০৯১২৬
ডহলি ০৫৩২৯-৭৫২২২, ০১৭৫৫-২৯৫৯৯৯
বিরামপুর ০৫৩২২-৫৬২২২
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
হবিগঞ্জ ০৮৩১-৬১১১১
মাধবপুর ০৮৩২৭-৫৬১০০
নবীগঞ্জ ০১৭৬৬-৬১২৯৮২
বানিয়াচং
শায়েস্তাগঞ্জ ০১৭১৯-৭৫৯০৯৮
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ঠাকুরগাও ০৫৬১-৫৩৪৪৪, ০১৭৩০-০০৯১৩১
পীরগঞ্জ ০৫৬২৪৫৬৫৫৫, ০১৭৩০-০০৯১৩৪
বালিয়াডাঙ্গী ০৫৬২২-৫৬১২২, ০১৭৩৩-৯৯৯৬২৭
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
পঞ্চগড় ০৫৬৮-৬১৩৩৩, ০১৭৩২-৫০৬৮১১
তেতুলিয়া ০৫৬৫৫-৭৫০৯৯, ০১৭২০-৮০২৫৭৮
বোদা ০১৭৬১-০৯৩৫৩৫
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।
ধানমণ্ডির পুরানো ১৫ এবং নতুন ৮/এ সড়কে অর্থাৎ সাতমসজিদ রোড এলাকায় প্রাচীরেবেষ্টিত মাঠটি মুঘল ঈদগাহ্। এটি ধানমণ্ডি ঈদগাহ্ নামে বহুল পরিচিত। এই ঈদগাহ্ প্রায় চারশ বছর আগে শাহ্ সুজার আমলে তাঁর দেওয়ান মীর আবুল কাসিম কর্তৃক নির্মিত। এই তথ্যটি ঈদগাহের কেন্দ্রীয় মেহরাবের শিলালিপি থেকে জানা যায়। প্রায় আড়াইশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং দেড়শ ফুট প্রস্থে চুন-সুরকির প্রাচীর বেষ্টিত থাকলেও বর্তমানে কেবলমাত্র পশ্চিম দিকের মূল উঁচু দেয়ালটি দণ্ডায়মান। এই ঈদগাহ ১৬৪০ সালে নির্মাণের পর থেকে ঈদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিখ্যাত স্থপতি আবু সৈয়দ এম, আহমেদ লিখেছেন যে, মোঘল আমলে নির্মিত এই ঈদগাহের মতো স্থাপত্যকলার নিদর্শন আর একটিও নেই। এই ঈদগাহটি পর্যটকগণের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
গাইবান্ধা ০৫৪১-৫১৫৫৫, ০১৭৩০-০০২৫৮২
গোবিন্দগঞ্জ ০১৭০৬-৩৩২৫২৫
সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।